সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

☆দায়ভার☆

শীতের রাত, কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে চারিদিক। রুমা পালিয়ে গেছে অনেক্ষণ হলো, রুমার মা অস্থিরভাবে পায়চারি করছেন শুধু কি করবেন যেনো বুঝতেই পারছেন না।
তিন ভাইয়ের এই একটাই বোন রুমা। ছোট থেকেই ভীষণ আদরের ছিল ,কিন্তু আট বছর বয়সে ভয়ংকর এক জ্বরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে এখন সে সবার কাছে রুমা পাগলি নামেই পরিচিত!
চিকিত্‍সাও খুব একটা কম হয়নি তার। তবে অশিক্ষিত পরিবারে জন্ম হওয়ায় জ্বিনে ধরেছে মনে করে ঝাড়ু পেটাই খেতে হয়েছে বেশি রুমার!
এতে ভালো তো হয়নি মাথাটা আরো বিগড়ে গেছে যেন! শীত আসলে পাগলামি বেড়ে যায় ।
রুমার মা দৌঁড়ে গিয়ে ছেলে রাজুকে ডেকে তুলেন "রাজু রুমাতো পালিয়ে গেছে! কোথায় গেল একটু দেখনা বাপ!"
রাজুর চোখে মুখে একরাশ বিরক্তি ফুটে উঠে,বলে"পালাতে দিলে কেন তুমি?আমি এখন কোথায় খুঁজবো তাকে?"
- আমার সাথেই তো ঘুমিয়েছে ,কখন যে উঠে গেল টের-ই পেলামনা ।
রাজু পাশের বাড়ি থেকে রনিকে ডেকে তুলে খুঁজতে থাকে? কিন্তু কোথাও পায়না!
ওরা যখন রুমার খোঁজে ব্যস্ত রুমা তখন অনেক দূরে, রুমাকে নিয়ে তখন চলছে মানুষ রুপি হিংস্র হায়নাদের পাশবিকতার চরম উল্লাস!
রুমা বাড়ি থেকে বেরুতেই ওদের একজন রুমার পথ আগলে দাঁড়ায়, বলে- রুমা বিয়ে করবি? লাল শাড়ি পরবি? চল তোকে বউ সাজিয়ে দিবো!
- হি হি লাল শাড়ি? কি মজা বউ সাজবো, লাল শাড়ি পরবো, রুমা খুশিতে হাত তালি দিতে থাকে !
শয়তানগুলো ওকে নিয়ে গিয়ে....!!
.
.
বেশ কিছুদিন হলো রুমার হাবভাব ওর মায়ের কাছে খুবএকটা ভালো ঠেকেনা।
রুমার শরীরে মাতৃত্বের লক্ষণ দেখে তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে যেন। কে তার এত বড় সর্বনাশ করলো?
মানুষরুপি জানোয়ার গুলো কিভাবে পারলো একটা অসহায় মেয়ের...আল্লাহ গো কি হবে এখন?
রুমার মায়ের কান্নায় আকাশবাতাস ভারি হয়ে উঠে।
কাঁদতে কাঁদতে রুমাকে নিয়ে বিচারে জন্য ছুটাছুটি করেন। কিন্তু ভাল মেয়েরাই যেখানে বিচারপায় না সেখানে একটা পাগলি কতটা বিচার-ই বা পেতে পারে?
ওর মা ডাক্তারের কাছে ও নিয়ে যান মেয়েকে হাত পা বেঁধে, ডাক্তার জানায় এখন বাচ্চা নষ্ট করা যাবেনা।
ফের কাঁদতে কাঁদতে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরেন তিনি। দিন দিন রুমার পাগলামিটা যেনো বাড়তেই থাকে, সারাক্ষণ কেউ না কেউ পাহারায় থাকতে হয়।
কিনা কি করে বসে মেয়েটা রাজ্যের চিন্তায় রাত জাগতে থাকেন মা ।
একদিন প্রচন্ড ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েলে রুমা আস্তে করে ঘর থেকে বেরিয়ে দৌঁড়াতে থাকে। রাত তখন অনেক, চারিদিক নিস্তব্ধ!
কিছুদুর যেতেই হেচট খেয়ে পড়ে যায় ও। প্রচন্ড প্রসব বেদনায় চটফট করতে থাকে রুমা। আবার উঠে দাঁডায়, সামনেই চোখে পড়ে পরিত্যাক্ত একটা ভাঙ্গা ঘর।
হয়তো কোন কালে গরু-ছাগল রাখা হতো ওখানে। ও ঘরটাতে কোন রকম ঢুকেই প্রচন্ড কষ্টে শুয়ে পড়ে ।
আশেপাশে জনমানবের চিহ্ন ওদেখা যায়না ।
পরদিন খুব ভোরে চারিদিকে কেমন জানি হৈচৈ শুনে রাজু মাকে ডেকে তুলে রুমাকে খুঁজতে থাকে ।
সারাবাড়ি খুঁজে কোথায় না পেয়ে দৌঁড়ে বেরিয়ে যায় ও। কিছুদুর যেতেই রনির সাথে দেখা, রনি বলে- "শুনেছিস রুমা কি করেছে?"
- "কি করছে?" রাজু আর্তনাদ করে উঠে।
চলনা নিজেই দেখবি ,রনি রাজুর হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় সেই পরিত্যক্ত ভাঙ্গাঘরটির পাশের পুকুরে।
রাজু দেখে রুমার হাতে ছোট্ট একটা শিশু! ও দুই হাতে শিশুটিকে অনবরত পানিতে ডুবাচ্ছে আবার তুলছে, শিশুটি যতই চিত্‍কার করছে রুমা ততই খিল খিল করে হাসছে!
আর সবাই কেমন হতভম্ব হয়ে তামাশা দেখছে!
রনি চিত্‍কার করে উঠে- "কি করছিস রুমা?"
রুমা হি হি করে হেসে বলে- "দেখছিস না গোসল করাচ্ছি? ওকে সাতার শিখাতে হবে না?"
রনি রাজু দুজন মিলে জোর করে শিশুটিকে কেড়ে নেয়, ততক্ষণে প্রচন্ড ঠান্ডায় সাদা হয়ে গেছে শিশুটা।
রাজুর চোখে জল গড়িয়ে পড়ে, ও তাকিয়ে থাকে শিশুটির দিকে।
কি অদ্ভুত সুন্দর মায়া কাড়া মুখ! কিন্তু কি পরিচয় নিয়ে বড় হবে ও???
একটু পরেই একবার মাত্র নড়ে উঠে শিশুটি পরপারে চলে যায়!
রাজু শিশুটিকে বুকে জড়িয়ে প্রচন্ড কষ্টে অপমানে কাঁদতেই থাকে! কে থামাবে তার কান্না?
.
লিখাঃ Asadur Rahman Hadi.

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চিরসত্য

"আজ তুমি যাকে যেভাবে কষ্ট দিচ্ছো, ঠকাচ্ছো, অবহেলা করছো, ইমোশন নিয়ে খেলতেছো, প্রতারণা করছো। ভেবো না যে তুমি পার পেয়ে যাবে। অতটা সোজা মনে করো না। হঠাৎ কোন একদিন আসবে যেদিন তুমি ঠিক একই ভাবে কারোর দ্বারা কষ্ট পাবে, ঠকে যাবে, অবহেলিত হবে, প্রতারিত হবে। আর সেই দিনটা খুব বেশি দূরে নয়... অপেক্ষায় থেকো!! . জানো তো এই পৃথিবীটা কিন্তু গোল। এখানে তুমি যা করবে, যে অন্যায় করবে, যে পাপ করবে, তা ঠিক ঘুরেফিরে কোন একদিন তোমার কাছে চলে আসবেই। আসতে বাধ্য... তোমার কারণে যদি কারোর চোখ থেকে এই ফোটা পানিও পড়ে যায়, অপেক্ষায় থাকো কেউ একজন তোমার চোখ থেকে শত শত ফোটা পানি পড়ার কারণ হবে!! . দিনের পর দিন যার সাথে ভালোবাসার মিথ্যে অভিনয় করে আসতেছো। একটু একটু করে একটা মানুষের বিশ্বাস নিয়ে মন মতো খেলতেছো। অথচ ও পাশের মানুষটা তোমার ছলনা কিছুই বুঝতে পারেনি, তাই বলে ভেবো না তুমি জিতে গেছো। অপেক্ষা করো একই ভাবে কেউ না কেউ তোমার ভালোবাসা নিয়ে মিথ্যে অভিনয় করে যাবে, তোমার বিশ্বাস নিয়ে খেলবে!! . আমি নিজেও এটা খেয়াল করেছি।  যদি কখনো কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি তো অন্য কোন দিন কেউ একজন তারচেয়েও বেশি খারাপ ব্যবহ

★মিষ্টি ঝগড়া★

- তোমার তো এখানে বসে থাকার কথা ছিলনা!! তবে এখানে কেন বসে আছো? হাদী কে শাসানোর মতো করে কথা গুলো বলতে থাকে অধরা। পাক্কা ১৫ মিনিট ধরে পুরো পার্ক তন্ন তন্ন করে হাদী কে খুজেছে অধরা। দু'জনের দেখা করার কথা ছিলো পার্কের অন্য কোনায় যেখানে অনেক গুলো ফুল গাছ আছে। লাল রঙের ফুল অধরার খুব পছন্দ। হাদী অধরা কে সবসময় লাল রঙের ফুল দিয়েই প্রপোজ করে। পার্কে আসলে যখনই অধরার অভিমান হয় তখন-ই গাছ থেকে একটা লাল ফুল এনে অধরাকে দেয়। আজ সে ধরনের কোনো সুযোগ নেই। অধরার দিকে না তাকিয়েই হাদী জবাব দিতে থাকে। - এখানে অনেক ঘাস আছে তাই বসে আছি। - তুমি কি ছাগল যে ঘাস দেখে বসতে হবে? -আমি ঘাস দেখে বসিনি, ঘাসের উপর বসে আছি। চাইলে তুমিও বসতে পার। - আমি তোমার মত ছাগল না। -আমি জানি তুমি ছাগল না। ছাগলের স্ত্রী লিঙ্গ ছাগী। - কি আমাকে তুমি ছাগী বললে!!!!???? -এখনো বলিনি, তবে ছাগলের বউ ছাগীই হয়। - আমি তোমার বউ না। - আমি তো বলিনি তুমি আমার বউ। - এতো কথা প্যাঁচাও ক্যান? তুমি একটা রামছাগল। - রামছাগলের দাড়ি থাকে। আমি একদম ক্লিন শেভ। - ওহ অসহ্য!!! কেনো যে তোমার মত ইডিয়েটের সাথে প্রেম করি? - আমরা প্রেম করছি না। আমরা

♥ঝগড়াটে মিষ্টি বউ♥

– এই যে মিস্টার বাদাম . কথাটা শুনে বন্ধ মুখ টা হা হয়ে গেলো। পার্কের টুলে বসে বসে বাদাম খাচ্ছি। এমন সময় মেয়েলী কন্ঠে এমন ডাক। এটা নিশ্চই কল্পনার বাইরে। . – এই আমার নাম আছে। আর আপনি অাগন্তুক কোথা থেকে এসে আমাকে মিস্টার বাদাম বলছেন?? – অামি অাপনার নাম জানি না তাই বাদাম খাচ্ছেন দেখে ওটা বললাম। – মাথায় সমস্যা??? – থাকতেও পারে। – ওই অাপনি অামাকে পাগল ভাবছেন?? – হতেও তো পারেন। – অাপনাকে অাপনাকে – কি?? – অামার মাথা। – তো এটা বলতে এরকম করা লাগে?? – ওহহ এই অাপনি কে?? – এতক্ষন যার সাথে ঝগড়া করছেন. – ও মোর খোদা অামারে উঠাই নাও না ক্যান। – দাড়ি বা মই কিছু তো খোদায় দিলো না উঠবেন কি করে?? – অাপনি কি পাবনা থেকে এসেছেন?? – মরতে যাবো পাবনা?? – তো অামাকে মারতে অাসছেন কেন?? – মারতে অাসলে তো সেই কখন মেরে ফেলতাম। – তো কেন এসেছেন?? – অাপনাকে নিতে। – কোথায়?? – পাবনায়। – অাপনার মাথায় সমস্যা অাপনি যান। – অাসুন তো। – কোথায়?? – অামার সাথে। – দেখুন অামার একজনের সাথে দেখা করার কথা। – লাগবেনা সেটা। – অাপনাকে অামি চিনিনা অাপনার সাথে কোথায় যাবো?? – এতক্ষন কথা বলার পরও অচেনা?? – হুমম