- তোমার তো এখানে বসে থাকার কথা ছিলনা!! তবে এখানে কেন বসে আছো?
হাদী কে শাসানোর মতো করে কথা গুলো বলতে থাকে অধরা।
পাক্কা ১৫ মিনিট ধরে পুরো পার্ক তন্ন তন্ন করে হাদী কে খুজেছে অধরা।
দু'জনের দেখা করার কথা ছিলো পার্কের অন্য কোনায় যেখানে অনেক গুলো ফুল গাছ আছে। লাল রঙের ফুল অধরার খুব পছন্দ।
হাদী অধরা কে সবসময় লাল রঙের ফুল দিয়েই প্রপোজ করে। পার্কে আসলে যখনই অধরার অভিমান হয় তখন-ই গাছ থেকে একটা লাল ফুল এনে অধরাকে দেয়।
আজ সে ধরনের কোনো সুযোগ নেই। অধরার দিকে না তাকিয়েই হাদী জবাব দিতে থাকে।
- এখানে অনেক ঘাস আছে তাই বসে আছি।
- তুমি কি ছাগল যে ঘাস দেখে বসতে হবে?
-আমি ঘাস দেখে বসিনি, ঘাসের উপর বসে আছি। চাইলে তুমিও বসতে পার।
- আমি তোমার মত ছাগল না।
-আমি জানি তুমি ছাগল না। ছাগলের স্ত্রী লিঙ্গ ছাগী।
- কি আমাকে তুমি ছাগী বললে!!!!????
-এখনো বলিনি, তবে ছাগলের বউ ছাগীই হয়।
- আমি তোমার বউ না।
- আমি তো বলিনি তুমি আমার বউ।
- এতো কথা প্যাঁচাও ক্যান? তুমি একটা রামছাগল।
- রামছাগলের দাড়ি থাকে। আমি একদম ক্লিন শেভ।
- ওহ অসহ্য!!! কেনো যে তোমার মত ইডিয়েটের সাথে প্রেম করি?
- আমরা প্রেম করছি না। আমরা ঝগড়া করছি।
- তোমার মতো রামছাগলের সাথে আমার ঝগড়া করতে বয়েই গেছে?
- আমি একটু আগেই শেভ করে এসেছি।আমার দাড়ি উঠলে চাপ দাড়ি ওঠে তা তুমি জানো।
- শেভ করেছো কেন? আমার চাপ দাড়ি-ই ভালো লাগে।
- তোমার মুখে তো কখনো দাড়ি দেখিনি। আগে তো জানতাম না তোমার দাড়ি হয়!!
- আমাকে কটা টাকা ধার দাও তো;
-কি করবে??
- প্রথমে একটা পিস্তল আর গুলি কিনবো।। তারপর তোমাকে গুলি করে মারবো। গরু কোথাকার। আমি কি আমার দাড়ির কথা বলেছি?
- আমার কাছে সিগারেট কেনার টাকা থাকে।পিস্তল কেনার নয়।।
- কি তুমি সিগারেট খেয়েছো!!??
- সিগারেট খেলে ক্যান্সার হয়ে মরার সম্ভাবনা আছে। তোমাকে আর কষ্ট করে মারতে হবেনা।
- একদম অলক্ষুনে কথা বলবা না। গরু ছাগল ভেড়া কোথাকার, বসে বসে ঘাস খাও।
.
প্রিয়তমার মুখ থেকে গরু ছাগল ভেড়া ডাক শুনতে খারাপ লাগে না। বরং ভালই লাগে।
অন্যান্য প্রেমিকের মত হাদীও তার ব্যাতিক্রম নয়।
সব প্রেমিক অবশ্য সিগারেট খায় না।
অধরা যেইসব বিষয়ে রেগে যায় হাদী সেইগুলোই বেশি করে।
এভাবে রাগানোর ভিতর একটা ভালবাসা থাকে।
অধরাকে এভাবে রাগানোর অধিকার শুধু হাদীর-ই আছে।
- আমি ঘাস খাচ্ছিনা। আমি বাদাম খাচ্ছি।(অবশ্য বাদামে আমার এ্যালার্জি)
- কই এতক্ষন তো খেয়াল করিনি! বাদাম কেনো খাচ্ছ?
অধরার খেয়াল করার কথা না। কারন ও এখনো হাদীর সামনে যায়নি। পেছন থেকেই কথা চালিয়ে যাচ্ছিল। তাই ঘাস খাওয়া আর বাদাম খাওয়ার পার্থক্য ধরতে পারেনি।
- বাদাম খেলে ত্বক ভালো হয়।
- হঠাৎ ত্বক ভালো করার নেশা ক্যান???
- আরেকটা প্রেম করবো তাই।
- তুমি আমাকে ছেড়ে আরেকটা ডাইনির সাথে প্রেম করবে!!??
ভালবাসার ভাগ কেউ দিতে চায় না। অধরাও তার ব্যাতিক্রম নয়।
হাদী অন্য মেয়ের দিকে তাকালেই সেই মেয়ে অধরার কাছে ডাইনি।
- তুমি যে ডাইনি তাতো জানতাম না!!!
- আমি ডাইনি না, তুমি যার সাথে প্রেম করবে তাকে ডাইনি বলেছি।
- ও ডাইনি না। ওর নাম অধরা
- থাকো পড়ে তোমার "ডাইনি অধরা" কে নিয়ে। আমার সাথে কথা বলতে আসবে না।
.
রেগে গেলে অধরা নিজের নামও ভুলে যায়।
হাদী অধরা কে অযথা রাগাতে ভালোবাসে এটা অধরাও জানে।
"ভালবাসায় মান অভিমান না হলে ঠিক জমে না" এটা কোনো মনিষী বলেছেন কিনা অধরা বা হাদী কারোর-ই জানা নেই।
হয়তো জগতের কোনো প্রেমিক-প্রেমিকার-ই জানা নেই। তবু সবাই মান-অভিমানের খেলায় মেতে ওঠে।
রাগারাগি মান-অভিমান ভালবাসার মাঝে অলিখিত চুক্তি।
.
- আমার পাশে একটু বসবে? জায়গাটা পরিষ্কার আছে।
- না বসবো না। তুমি একটা ফাযিল। আমার মন নিয়ে খেলা করবে। আমার মন নরম। তাই যখন তখন তোমার খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে হবে।
-একটু বসো। আমি তোমার মন নিয়ে খেলবো না। তোমার চুলগুলির সাথে দুষ্টুমি করবো। তোমার চুলের মিষ্টি ঘ্রানে মাতাল হয়ে যাব
- এহ্ শখ কতো!!! আমি মাতাল ছেলেকে পছন্দ করিনা।
কথাটা বলতে বলতেই অধরা হাদীর পাশে বসলো।
"যখন ভালবাসাটা অনুভব করা যায় তখন প্রেমিক-প্রেমিকা দুজনেই মাতাল হয়ে যায়। আবল-তাবল কথা বলতে ভালো লাগে।
অধরাও এখন মাতাল হাদীর ভালবাসায়।
আচ্ছা! মাতালের স্ত্রী লিঙ্গ কি? না থাক। সব ক্ষেত্রে ব্যাকরন টানলে চলে না। ভালবাসার কোনো ব্যাকরন হয় না।"
- ফুচকা খাবে? ফুচকা খেলে মাতাল হওয়ার চান্স নেই।
- না। যা খাচ্ছিলে তাই খাবো।
বাদামের খোসাগুলো অধরার দিকে এগিয়ে দিলো হাদী। দু-চারটা বাদামের খোসা মুখে চালান করে দিল অধরা।
আস্ত একটা মাতাল মেয়ে। বাদামের খোসাও চেনে না। সেগুলো দিব্যি চাবিয়ে যাচ্ছে।
একটু দেরিতে চিনলেও হাদীকে তাড়া দিতে দেরি করলো না অধরা।
.
পার্কে একটা ছেলে দৌড়াচ্ছে, একটা মেয়ের তাড়া খেয়ে। তারা হাপিয়ে গেলে ফুচকা ওয়ালার সামনে থামবে। ফুচকার খোসাগুলো বাদামের খোসার মত নয়। ওটা খাওয়া যায়। "ভালবাসায় বিভোর জোড়া গুলো এভাবেই যুগে যুগে মাতলামির সংজ্ঞা বদলে দেবে।"
.
লিখাঃ Asadur Rahman Hadi.
"আজ তুমি যাকে যেভাবে কষ্ট দিচ্ছো, ঠকাচ্ছো, অবহেলা করছো, ইমোশন নিয়ে খেলতেছো, প্রতারণা করছো। ভেবো না যে তুমি পার পেয়ে যাবে। অতটা সোজা মনে করো না। হঠাৎ কোন একদিন আসবে যেদিন তুমি ঠিক একই ভাবে কারোর দ্বারা কষ্ট পাবে, ঠকে যাবে, অবহেলিত হবে, প্রতারিত হবে। আর সেই দিনটা খুব বেশি দূরে নয়... অপেক্ষায় থেকো!! . জানো তো এই পৃথিবীটা কিন্তু গোল। এখানে তুমি যা করবে, যে অন্যায় করবে, যে পাপ করবে, তা ঠিক ঘুরেফিরে কোন একদিন তোমার কাছে চলে আসবেই। আসতে বাধ্য... তোমার কারণে যদি কারোর চোখ থেকে এই ফোটা পানিও পড়ে যায়, অপেক্ষায় থাকো কেউ একজন তোমার চোখ থেকে শত শত ফোটা পানি পড়ার কারণ হবে!! . দিনের পর দিন যার সাথে ভালোবাসার মিথ্যে অভিনয় করে আসতেছো। একটু একটু করে একটা মানুষের বিশ্বাস নিয়ে মন মতো খেলতেছো। অথচ ও পাশের মানুষটা তোমার ছলনা কিছুই বুঝতে পারেনি, তাই বলে ভেবো না তুমি জিতে গেছো। অপেক্ষা করো একই ভাবে কেউ না কেউ তোমার ভালোবাসা নিয়ে মিথ্যে অভিনয় করে যাবে, তোমার বিশ্বাস নিয়ে খেলবে!! . আমি নিজেও এটা খেয়াল করেছি। যদি কখনো কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি তো অন্য কোন দিন কেউ একজন তারচেয়েও বেশি খারাপ ব্যবহ