সকাল। কুয়াশা কাটিয়ে সবে মাত্র সূর্যের
মিস্টি আলো চারিদিকে আভা ছড়াচ্ছে।
ইউনিভার্সিটির সামনের একটা চায়ের টং-এ বসে খুব মনোযোগ দিয়ে গরম
চায়ে ভিজিয়ে পাউরুটি খাচ্ছে হাদী ।
.
হঠাৎ একটা রিকশা এসে থামলো টং টার
পাশে। রিকশা থেকে নামছে স্পর্শীয়া । লাল রংয়ের একটা শালে স্পর্শীয়াকে আজ অপূর্ব লাগছে ।
.
- “কি ব্যাপার ক্লাসে যাবি না?”
স্পর্শীয়ার কথায় হাদীর হুশ ফেরে ।
- “না রে, মুড নেই।” চায়ে চুমুক
দিতে দিতে বলল হাদী।
.
- “তোকে না বলছিলাম আমার
একটা স্কেচ আর্ট করে দিতে। করেছিস
ঐটা ?”
- “না । টাইম কোথায় আমার?”
- “তাহমিনাকে যে করে দিলি।”
- “আরে ও আমাকে এর জন্য ২০০
টাকা দিছে।
তুই দে, তোকেও করে দিবো।”
- “টাকা নিয়ে ছবি আঁকবি? তুই না আমার
বেস্ট ফ্রেন্ড”
- লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি পর্যন্ত
টাকা নিতেন। উনি বলেছেন,
হে বৎস ছবি এঁকে অবশ্যই টাকা নিবে। নইলে তোমার মেধার মূল্য দিবে না কেউ।
- লাগবে না তোর আর্ট । এখন ক্লাসে চল।
- তোকে না বললাম আজ ক্লাসে যাব না।
বাংলায় তো বলছি।
নাকি বাংলা ভাষা বুঝিস না।
আর এখন এইখান থেকে যা তো ।
আমাকে একটু শান্তিতে চা খেতে দে
- ওকে বাই। আমি গেলাম। আর তোর
সাখে কোনো দিন কথা বলব না
.
মনে মনে অনেক রেগে গেছে স্পর্শীয়া।
ভাবছে আর কোনোদিন হাদীর সাথে কথা বলবে না।
ছেলেটা কেমন জানি?
একটুও ভালো না। ওকে একটুও বোঝে না । কিন্তু বেশীক্ষণ এই রাগ ও ধরে রাখতে পারবে না, এই শয়তান হাদী কেই যে ও সবচেয়ে বেশী ভালোবাসে।।
.
কিন্তু স্পর্শীয়া তা এখনও জানায়নি।
কারণ তার আত্মসম্মানবোধ প্রবল।
আর হাদী?
তার এতো টাইম নেই এইসব
ভাবার। এই হয়তো কোন ক্যান্সার রোগীর জন্যে চাঁদা তুলে সাহায্য করছে। আবার এই হয়তো টোকাইদের স্কুলে ফ্রি পড়াচ্ছে। অনাথ আশ্রমের বাচ্চাদের চকলেট বা ফুচকা খাওয়াচ্ছে। পথের অসুস্থ ফকিরকে নিজের টিউশনির টাকাটা দিয়ে কম্বল কিনে দিয়েছে,
অথচ এই প্রচন্ড শীতে তার নিজের-ই
কোনো শীতের পোশাক নেই ।
.
আজ স্পর্শীয়ার জন্মদিন। গত কয়েক দিন
ধরে ও একটু অসুস্থ । তবে ফোন করে ওর
ভার্সিটির সব বন্ধুদের ইনভাইট করেছে।
একটু আগে ফোন করেছে সবাই তার
বাসায় আসবে। নিশ্চয় হাদীও
আসবে। সেটা ভেবেই অসুস্থের মধ্যেও উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়েছে স্পর্শীয়া।
.
কিন্তু সন্ধ্যায় দেখা গেলো আসেনি হাদী। সে নাকি পথ শিশুদের শীতের ভাপা পিঠা খাওয়ানো কার্যক্রমে গিয়েছে।
চোখে পানি এসে যাচ্ছিলো স্পর্শীয়ার। ও ঠিক করছে আর কখনো অনিকে নিয়ে ভাববে না। যার তাকে দেখতে আসার টাইম
নেই।
বন্ধুরা একটু পর চলে গেল।
.
রাত এগারটায় হঠাৎ রুমে এসে হাজির হাদী। বন্ধু হিসেবে হাদী কে চিনে বাসার সবাই। তাই কেউ তাকে কিছু বলে নি।
.
- “কি ব্যাপার, তুই নাকি অসুস্থ? এই ঢং ধরা শিখলি কার থেকে?”
রুমে ঢুকেই বলল হাদী।
- “তুই জানিস না মেয়েদের রুমে নক
করে ঢুকতে হয়?”
- “আরেব্বাহ্! তুই মেয়ে? জানতাম নাতো? তো পার্টি কেমন হলো? কেক টেক কিছু রেখেছিস?”
- “এতো রাতে তোকে আসতে বলল
কে?” রাগ এখনও পড়ে নি স্পর্শীয়ার।
- “আরে আমি তো পথ শিশুদের পিঠা
দিতে গেলাম। ভাবলাম তোকে রাতে এসে দেখে যাবো।”
.
এর মধ্যে কেক নিয়ে রুমে ঢুকলেন স্পর্শীয়ার আম্মু।
.
- “থ্যাংকু আন্টি"
.
খেয়ে ধেয়ে যাওয়ার সময় ব্যাগ থেকে বের করে তাজিয়া কে একটা প্যাকেট দিল হাদী।
- “নে তোর বার্থডে গিফট।
আমি যাওয়ার পর খুলবি।”
.
হাদী যাওয়ার পর প্যাকেট খুললো স্পর্শীয়া।
একটা ড্রয়িং খাতা।
খাতা খুলে অবাক স্পর্শীয়া।
প্রত্যেকটা পাতায় স্পর্শীয়ার মুখের চমৎকার সব স্কেচ।
চোখে পানি এসে গেল স্পর্শীয়ার।
ইচ্ছে হলো খুশিতে চিৎকার করতে।
শেষ পাতায় একটা বাঁদরের ছবি।
.
নিচে হাদীর একটা চিঠি।
“এই যে উপরে বাঁদরের ছবিটা দেখছিস। এইটাই কিন্তু তোর আসল ছবি।
বাকি ছবি গুলি তোর ফেসবুক অ্যালবাম থেকে দেখে আঁকা।
আর একটা কথা। সবাই বলে,আমি নাকি লাগামহীন একটা ছেলে।
এমন একটা মেয়ে আমার দরকার, যে আমার লাগামটা ধরবে। তুই কি এই মহান দায়িত্বটা নিবি, প্লিজ?
আমার মনে হয় তুই এই কাজের জন্যে পারফেক্ট।
যদি দায়িত্বটা নিতে চাস,
তাহলে কোনো এক কুয়াশা মাখা সকালে চিৎকার
করে বলিস , "ভালোবাসি "
অথবা মোবাইলে টেক্সট করে দিস।
.
চিঠিটা পড়ে মোবাইলটা হাতে নিলো স্পর্শীয়া। আবার চোখে পানি এসে গেছে তার।
উফ্, এতো পানিও আসতে পারে আমার চোখে- ভাবতে ভাবতে মোবাইলে লেখা শুরু
করলো স্পর্শীয়া।।
.
লিখাঃ Asadur Rahman Hadi.