সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

★অভিমানী বউ★


বউ বাপের বাড়ি গেছে। এমনি এমনি যায় নাই, রাগ করে গেছে।
.
অবশ্য রাগ করার যথেষ্ট কারণ আছে।
গত ৩ সপ্তাহ হল তার বাইনা, তাকে নিয়ে বাইরে ডিনার করতে হবে।
আর আমি আজ নয় কাল বলতে বলতে ৩ সপ্তাহ কাটিয়ে তার ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে ফেলেছি।
.
বউটা রাগি, কিন্তু এতটা রাগি না যে, আমার উপর রাগ করে বাপের বাড়ি যাবে!
ঘটনায় আসা যাক। আজ সকালে অফিসের উদ্দেশ্য বের হবার আগে যথারীতি বউয়ের কাছে প্রমিস করে গেলাম…….,
.
যেভাবেই হোক আজ দ্রুত অফিস থেকে ফিরেই তাকে নিয়ে বাইরে খেতে যাবো। সবকিছু ঠিকঠাক ছিলো, মাঝখানে একটা ঘটনা ঘটে গেলো।
.
অফিসের কলিগ আলিম সাহেবের মেয়ে সন্তান হয়েছে গতকাল। আর সেই সুবাদে আজকে তিনি আমাকে সন্ধ্যায় খাওয়াবেন।

তিনি নাছোরবান্দা! ছাড়াছাড়ির কোন উপায় নেই। এছাড়া অনেকদিন হলো, তার কাছে খাওয়ার আবদার করছিলাম!
তিনি একরকম জোড় করেই নিয়ে গেলেন, অনিচ্ছা সত্বেও যেতে হলো।
তারপরে বাসায় ফিরতে ফিরতে অনেক দেরী হয়ে গেছে!
.
যতক্ষণে ফিরলাম, দেখি ঘরে তালা ঝুলছে!
২য় চাবিটা দিয়ে ঘর খুলে দেখি, ঘরের ভিতর মোটামুটি টর্নেডো বয়ে গেছে। সবকিছু এলোমেলো, বিছানা উল্টাপাল্টা।
.
ঘরের ভিতর কিছু দ্রব্যাদির ভাঙ্গা অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
অ্যাকুরিয়ামের মাছটা মেঝেতে মরে পরে আছে।
এসব দেখে আমি ঠিক কি করব? বুঝে উঠতে পারলাম না।
তাৎক্ষণিক কোন প্রতিক্রিয়াও কাজ করলো না। সাতপাঁচ না ভেবে কোনমতে বিছানা ঠিক করে ঘুমুতে গেলাম।
এপাশ-ওপাশ করছি, আর ঘুমানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু, ঘুম যেনো আমার সাথে আড়ি দিয়েছে!
কিছুতেই দু-চোখের পাতা এক হচ্ছে না। তবুও বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
এভাবে কতক্ষণ কেটে গেছে জানিনা। হয়তো হালক ঘুম ঘুম এসেছিল।
.
ঠিক তখনই ফোনটা বেজে উঠে জানান দিলো, কেউ একজন আমাকে স্বরণ করেছে।
.
ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম নাম্বারটা “বউ” লেখা দিয়ে সেভ করা। মোবাইল স্কিনে তখন রাত ১১ টা ৩৫। ফোনটা রিসিভ করলাম……
- হ্যালো………
- হ্যালো দুলাভাই……
- ওহ, তুমি!
- আসবেন না আমাদের বাসায়?
- না……
- বুবু কিন্তু রাগ করে আছে। অনেকক্ষণ হল, পুকুরপাড়ে দাড়িয়ে আছে। আমি ডাকতে গেলাম, আমার সাথে রাগারাগি করে পাঠিয়ে দিল! মোবাইলটাও ওর রুমে পড়ে আছে……
- আচ্ছা থাকুক, দেখি আমি আসছি……
শালিকা ফোন করেছিলো। এর আগেও দু-
একবার বউ রাগ করে বাপের বাড়ি আসলেও যতই রাত হোক, আমি চলে আসতাম।
.
কেননা, বউকে নিয়ে ঘুমুতে ঘুমতে একটা অভ্যাস হয়ে গেছে। প্রতিদিন রাতে ঘুমন্ত বউয়ের কপালে একটা চুমু না খেলে এখন আর ঘুম আসেনা।
.
বউ বাহুতে মাথা না রাখলে ঘুম হয় না। আর আমি জানি, ওরও ঘুম হবে না।
প্রতিদিন রাতে ওই আগে ঘুমিয়ে যায়। আমার বাহুতে মাথা রাখে, ওর চুলের ভিতরে আমি হাত বুলিয়ে দেই,
হঠাৎ করে দেখি ও ঘুমো ঘুমো চোখে আমার দিকে তাকায়।
.
তারপরে ঘুমন্ত অবস্থায়ই অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে ভেংচি কাটে, তারপরে আরেকটু কাছে এসে জড়িয়ে ধরে ঘুমায়।
.
আর এই দৃশ্যটা আমার কাছে পৃথিবীর যেকোন জিনিসের থেকে মূল্যবান।
খুব ভালো লাগে, এটা না দেখলে আমার ঘুম হয় না।

আমি হাদী। আর আমার বউয়ের নাম তাহমিনা। আমাদের বিয়েটা পারিবারিকভাবেই সম্পূর্ন হয়েছিল।
বিয়েটা হয়েছে, ১ বছরেরও বেশি সময় হলো।
.
মায়ের বান্ধবির মেয়ে, যদিও বিয়ের আগ পর্যন্তও এ কথাটা জানতাম না। বউ পুরোপুরি ধার্মিক না হলেও, মোটামুটি ধার্মিক বলা চলে।
.
বিয়ের আগে কোন প্রেম করেনি। অবশ্য আমি এমনটা না। প্রেম করেছিলাম দু- তিনটা। কিন্তু, বিধিবাম একটাও টিকে নি।
.
তবে, মেয়ে মানুষ আমাকে ছেড়ে চলে যাবে বলেই, ভেঙ্গে পড়ার মত ছেলে আমি ছিলাম না। নতুন উদ্যমে সবকিছু শুরু করতাম।
কে জানে, হইত তাদেরকে মন থেকে ভালবাসতে পারি নি। তবে, বর্তমানে বউ যদি কোনকারণে আমাকে ছেড়ে চলে যায়?
.
জানিনা কি হবে, তবে সম্ভবত আমার বেচে থাকাটা অনেক কঠিন হয়ে যাবে।  কারণ, নিঃশ্বাস নেওয়া ছাড়া কেউ বাচতে পারেনা।
.
তাহমিনাদের বাড়ি আমাদের বাসা থেকে প্রায় ৫-৬ মাইল।
এতরাতে রাস্তায় কিছু পাওয়ার আশা করা বোকামি,তবুও একটা মিনিট্রাকে করে প্রায় ৫ মাইলের বেশি এসেছি, আর বাকিটুকু হেটে যেতে হবে।
সঙ্গি মোবাইল, আর মোবাইলের টর্চ।
প্রায় ১৫-২০ দ্রুত গতিতে হেটে যাওয়ার পরে অবশেষে ওদের বাড়িতে গিয়ে পৌছালাম।
.
ওদের বাড়িটা গেট করা, কারণ এই দিকটা শহরও না আবার গ্রামও না।
আবার ফোন দিলাম, শালিকা উঠে বাইরের গেট খুলে দিল। আমি দেখে মুছকি হাসল সে। আমি বললাম,
— হাসির কি হলো???
— আপনাদের দেখে! কি প্রেম মাইরি!
— আগে বিয়ে কর, তারপরে বুঝবা। তো সে এখন কোথায়?
— আমার রুমে!
— ঘুমিয়ে পড়েছে?
— না, আর আমাকেও ঘুমাতে দিচ্ছে না।
— তুমি একটা কাজ কর, এখন অন্য রুমে গিয়ে ঘুমাও, আমি দেখি কি করা যায়..
— ওকে…
.
ধীরপায়ে ওর রুমের দিকে গেলাম। দরজায় পা রাখতেই তাহমিনা বলে উঠল……
— আপনি এখানে এসেছেন কেন?
— আমি কোন কথা না বলে কান ধরে মুখটা মলিন করে ফেললাম। যেন তার মন গলে যায়।
কিন্তু কাজ হলো না, ও হঠাৎ চিৎকার করে কথা বলতে চাইলো।
আমি জ্বলদি করে গিয়ে ওর মুখটা চেপে ধরলাম……
- ছাড়ুন বলছি……
- আমার ভুল হয়ে গেছে…
- প্রতিদিনই তো হয়……
— আর হবে না……
— প্রতিদিনই বলেন……
— এবার সত্যি বলছি…
- বলা লাগবে না, চলে যান……
— সত্যি যাবো তো???
— হুম সত্যি…
— তাহলে আর কি করার? দেখি নতুন কাউকে খুজতে হবে বিয়ে করার জন্য, অনুমতি দাও, আমি আবার বউ ছাড়া ঘুমোতে পারব না……
— আচ্ছা দিলাম……
— তাইলে  ঠিক আছে, আমি চললাম……
— খুন করে ফেলবো, হুম....
— কাকে?
— আপনাকে!
— আমি তো খুন হয়েই আছি।
তাহমিনা নিঃশব্দে হেসে উঠলো। এই হাসিটার দাম আমার জানা নেই, পৃথিবীতে কিছু জিনিস আছে যা কখনো কোন মূল্য দিয়ে কেনা যায় না,
……যেগুলো হয় অমূল্য।
আর.....
এই হাসিটা হল, সেই অমূল্য সম্পদ।
জীবন সুখের হতে আর কি দরকার??
.
লিখাঃ Asadur Rahman Hadi.

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চিরসত্য

"আজ তুমি যাকে যেভাবে কষ্ট দিচ্ছো, ঠকাচ্ছো, অবহেলা করছো, ইমোশন নিয়ে খেলতেছো, প্রতারণা করছো। ভেবো না যে তুমি পার পেয়ে যাবে। অতটা সোজা মনে করো না। হঠাৎ কোন একদিন আসবে যেদিন তুমি ঠিক একই ভাবে কারোর দ্বারা কষ্ট পাবে, ঠকে যাবে, অবহেলিত হবে, প্রতারিত হবে। আর সেই দিনটা খুব বেশি দূরে নয়... অপেক্ষায় থেকো!! . জানো তো এই পৃথিবীটা কিন্তু গোল। এখানে তুমি যা করবে, যে অন্যায় করবে, যে পাপ করবে, তা ঠিক ঘুরেফিরে কোন একদিন তোমার কাছে চলে আসবেই। আসতে বাধ্য... তোমার কারণে যদি কারোর চোখ থেকে এই ফোটা পানিও পড়ে যায়, অপেক্ষায় থাকো কেউ একজন তোমার চোখ থেকে শত শত ফোটা পানি পড়ার কারণ হবে!! . দিনের পর দিন যার সাথে ভালোবাসার মিথ্যে অভিনয় করে আসতেছো। একটু একটু করে একটা মানুষের বিশ্বাস নিয়ে মন মতো খেলতেছো। অথচ ও পাশের মানুষটা তোমার ছলনা কিছুই বুঝতে পারেনি, তাই বলে ভেবো না তুমি জিতে গেছো। অপেক্ষা করো একই ভাবে কেউ না কেউ তোমার ভালোবাসা নিয়ে মিথ্যে অভিনয় করে যাবে, তোমার বিশ্বাস নিয়ে খেলবে!! . আমি নিজেও এটা খেয়াল করেছি।  যদি কখনো কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি তো অন্য কোন দিন কেউ একজন তারচেয়েও বেশি খারাপ ব্যবহ

★মিষ্টি ঝগড়া★

- তোমার তো এখানে বসে থাকার কথা ছিলনা!! তবে এখানে কেন বসে আছো? হাদী কে শাসানোর মতো করে কথা গুলো বলতে থাকে অধরা। পাক্কা ১৫ মিনিট ধরে পুরো পার্ক তন্ন তন্ন করে হাদী কে খুজেছে অধরা। দু'জনের দেখা করার কথা ছিলো পার্কের অন্য কোনায় যেখানে অনেক গুলো ফুল গাছ আছে। লাল রঙের ফুল অধরার খুব পছন্দ। হাদী অধরা কে সবসময় লাল রঙের ফুল দিয়েই প্রপোজ করে। পার্কে আসলে যখনই অধরার অভিমান হয় তখন-ই গাছ থেকে একটা লাল ফুল এনে অধরাকে দেয়। আজ সে ধরনের কোনো সুযোগ নেই। অধরার দিকে না তাকিয়েই হাদী জবাব দিতে থাকে। - এখানে অনেক ঘাস আছে তাই বসে আছি। - তুমি কি ছাগল যে ঘাস দেখে বসতে হবে? -আমি ঘাস দেখে বসিনি, ঘাসের উপর বসে আছি। চাইলে তুমিও বসতে পার। - আমি তোমার মত ছাগল না। -আমি জানি তুমি ছাগল না। ছাগলের স্ত্রী লিঙ্গ ছাগী। - কি আমাকে তুমি ছাগী বললে!!!!???? -এখনো বলিনি, তবে ছাগলের বউ ছাগীই হয়। - আমি তোমার বউ না। - আমি তো বলিনি তুমি আমার বউ। - এতো কথা প্যাঁচাও ক্যান? তুমি একটা রামছাগল। - রামছাগলের দাড়ি থাকে। আমি একদম ক্লিন শেভ। - ওহ অসহ্য!!! কেনো যে তোমার মত ইডিয়েটের সাথে প্রেম করি? - আমরা প্রেম করছি না। আমরা

♥ঝগড়াটে মিষ্টি বউ♥

– এই যে মিস্টার বাদাম . কথাটা শুনে বন্ধ মুখ টা হা হয়ে গেলো। পার্কের টুলে বসে বসে বাদাম খাচ্ছি। এমন সময় মেয়েলী কন্ঠে এমন ডাক। এটা নিশ্চই কল্পনার বাইরে। . – এই আমার নাম আছে। আর আপনি অাগন্তুক কোথা থেকে এসে আমাকে মিস্টার বাদাম বলছেন?? – অামি অাপনার নাম জানি না তাই বাদাম খাচ্ছেন দেখে ওটা বললাম। – মাথায় সমস্যা??? – থাকতেও পারে। – ওই অাপনি অামাকে পাগল ভাবছেন?? – হতেও তো পারেন। – অাপনাকে অাপনাকে – কি?? – অামার মাথা। – তো এটা বলতে এরকম করা লাগে?? – ওহহ এই অাপনি কে?? – এতক্ষন যার সাথে ঝগড়া করছেন. – ও মোর খোদা অামারে উঠাই নাও না ক্যান। – দাড়ি বা মই কিছু তো খোদায় দিলো না উঠবেন কি করে?? – অাপনি কি পাবনা থেকে এসেছেন?? – মরতে যাবো পাবনা?? – তো অামাকে মারতে অাসছেন কেন?? – মারতে অাসলে তো সেই কখন মেরে ফেলতাম। – তো কেন এসেছেন?? – অাপনাকে নিতে। – কোথায়?? – পাবনায়। – অাপনার মাথায় সমস্যা অাপনি যান। – অাসুন তো। – কোথায়?? – অামার সাথে। – দেখুন অামার একজনের সাথে দেখা করার কথা। – লাগবেনা সেটা। – অাপনাকে অামি চিনিনা অাপনার সাথে কোথায় যাবো?? – এতক্ষন কথা বলার পরও অচেনা?? – হুমম