হাদীর সঙ্গে স্পর্শীয়ার পরিচয় সেই কলেজ থেকেই। কলেজের সময়টাতে তারা যে খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল, সেটাও বলা যায় না। ঘনিষ্ঠতাটা একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদেই হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিন অপরিচিত সব মুখের ভিড়ে কলেজের ক্লাসমেট হাদীকে দেখে স্পর্শীয়ার কী ভীষণ আনন্দ লাগছিল, তা স্পর্শীয়ার চেয়ে ভালো কে বা জানে!
সেই দিন থেকেই বলতে গেলে হাদী-স্পর্শীয়ার বন্ধুত্বটা শুরু। ক্লাসের ফাঁকে একত্রে ফুচকা খাওয়া, একসঙ্গে বাড়ি ফেরা—এসব তো ছিলোই, স্পর্শীয়ার প্রেমিকের সঙ্গে যখন স্পর্শীয়ার ঝগড়াঝাঁটি হতো, তখন সেই ঝগড়া প্রশমিত করার দায়িত্বও ছিল হাদীর।
হাদীর জন্য স্পর্শীয়াও কম করেনি। সেকেন্ড ইয়ারে তারা যখন উঠল, তখন এক জুনিয়র মেয়েকে হাদীর বেশ মনে ধরল। স্পর্শীয়া বেশ চেষ্টা করল হাদীর সঙ্গে মেয়েটাকে মিলিয়ে দেওয়ার। কিন্তু হলো না। স্পর্শীয়া ব্যর্থ হয়েছিল।
স্পর্শীয়া সে সময় আরো একটা ব্যাপারে ব্যর্থ হয়েছিল। সে অনেক চেষ্টার পরও নিজের প্রেমটা ধরে রাখতে পারেনি। সেকেন্ড ইয়ারে থাকার সময় স্পর্শীয়ার চার বছরের প্রেমটা ব্রেকআপের দিকে গড়াল। সময়টা স্পর্শীয়ার জন্য মোটেই ভালো ছিল না। সে সময় স্পর্শীয়াকে ভীষণ সাপোর্ট দিয়েছিল হাদী। সব মিলিয়ে হাদী যেমন স্পর্শীয়ার জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠল, তেমনি স্পর্শীয়াও হাদীর জন্য। তারা অবাক হয়ে খেয়াল করলো, একা কোনো সুন্দর জায়গায় ঘুরতে গেলে তারা একে অপরকে মিস করে, ভালো কিছু খাওয়ার সময় একে অপরের কথা মনে পড়ে তাদের, ভালো সময়গুলোতে একে অপরের উপস্থিতিই তাদের কাছে সবচেয়ে কাম্য।
হাদী-স্পর্শীয়া দুজনেরই মনে হলো, এই অপরিহার্যতার নামই ভালোবাসা। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বারবার মনে পড়াই প্রেমে পড়া।
বাস্তবে এ রকম হাদী-স্পর্শীয়া অনেক আছেন, যাঁরা বন্ধুত্বের অনেক বছর পার করে বুঝতে পারেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বন্ধুত্বটা প্রেমের পথে গড়িয়েছে। বন্ধুত্ব প্রেমের দিকে গড়ানোর বিষয়টা অস্বাভাবিক নয়, বরং খুবই স্বাভাবিক। একজন বন্ধুকে যখন জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়া যায়, তখন তাঁর অসংখ্য ইতিবাচক দিক আছে।
.
চলুন, এবার জেনে নিই প্রিয় বন্ধুকে জীবনসঙ্গী হিসেবে যখন আপনি পাবেন তখন কেমন হবে সম্পর্কটা :
১. প্রিয় বন্ধু আপনার অতীত সম্পর্কে অবগত থাকবে : প্রিয় বন্ধুকে জীবনসঙ্গী হিসেবে যখন আপনি পেয়ে যাবেন, তখন সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো আপনার অতীতের প্রতিটি বিষয়েই সে অবগত। নতুন করে সেটার ব্যাখ্যা কিংবা কোনো অজুহাত তৈরি করতে হবে না আপনাকে; বরং আপনার প্রতিটা সূক্ষ্ম অনুভূতির মূল্য সে জানবে।
২. আপনার স্বাচ্ছন্দ্যের আশ্রয় হবে সে : নতুন একটা মানুষের সঙ্গে বসবাস করাটা শুরুর দিকে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ নাও হতে পারে। অনেক অস্বস্তি থাকবে, একই সঙ্গে থাকবে অনেক জড়তা। প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে সেদিক থেকে আপনি একটা প্রশান্তির আশ্রয় শুরু থেকেই পাবেন।
৩. আপনাকে কোনোরকম ভান করতে হবে না : প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে নতুন জীবনে যখন আপনি যাবেন, তখন আপনাকে তার সামনে কোনোরকম ভান করতে হবে না। আপনি সহজেই আপনার রাগ, হিংসা, অনিশ্চয়তা প্রকাশের সুযোগ পাবেন। সেও জানবে কীভাবে সেটা সামাল দিতে হয়।
৪. সব সময়ই কিছু না-কিছু নিয়ে বলার মতো কথা থাকবে : বন্ধুকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়ার সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো, আপনি কখনো একঘেয়ে বোধ করবেন না; বরং সব সময়েই আপনাদের গল্প করার কোনো না-কোনো বিষয় থাকবেই। হয়তো রাতে ঘুমানোর সময়্টা গল্প করতে করতে কখন সকালে পরিণত হবে, আপনি সেটাই খেয়াল করবেন না।
৫. স্বাধীনতা : প্রিয় বন্ধুকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনি আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জীবনে পাবেন। সেটা হলো আপনার স্বাধীনতা। প্রিয় বন্ধু আপনার ভালো লাগা, মন্দ-লাগাগুলো যেমন জানবে, তেমনি জানবে আপনি কোন জায়গায় কতটুকু স্বাধীনচেতা।
প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে হাতে হাত রেখে বার্ধক্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার মতো আনন্দময় বার্ধক্য কমই হতে পারে। তবে কোনো বিষয়ই আনন্দময় নয়, যদি একে অপরের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ না থাকে।
.
লিখাঃ Asadur Rahman Hadi.