সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভালোবাসা II


যেদিন কলেজে প্রথম যাই সেদিন আমি নিশ্চুপ ছিলাম। তেমন কাউকে চিনি না। প্রথম কয়েকদিন ক্লাস হয়নি। এর কয়েক দিন ঠিকঠাক মত ক্লাস হচ্ছে। আমি একটু লাজুক টাইপের ছিলাম।
হঠাত্‍ ক্লাস চলাকালীন সময়ে একটা মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে কি যেন করল। মানে চোখ টিপা মারল আরকি। আমি শরমে মাথা নিচু করে ফেললাম। মেয়েটার নাম স্পর্শীয়া।

একদিন ক্যাম্পাসে হেটে যাচ্ছিলাম হঠাত্‍ হাম্বা বলে ডাক দিল। আমি বামে ডানে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই তার মানে আমিই হাম্বা। আচ্ছা আমি কি গরু? বাসায় এসে নিজের কোমড়ের নিচে তাকিয়ে দেখলাম কই আমার তো লেজ নেই। আমার তো দুইটা শিং নেই তাহলে হাম্বা বলে ডাক দিল কেন? এই মেয়েটা একটা বদ মেয়ে। আমি কত ভদ্র ছেলে আর আমাকে হাম্বা বলে।

এরপর থেকে স্পর্শীয়াকে দেখলেই নিজেকে আড়াল করে রাখতাম। কিন্তু মেয়েটার সামনে কিভাবে যেন হাজির হয়ে যেতাম। এবার আমাকে রামছাগল বলে ডাকল। আমি মাথা নিচু করে বললাম আপনি আমাকে দেখলে এই রকম করেন কেন? মাথা নিচু করে এজন্যই বললাম মেয়েদের চোখের দিকে তাকাতে পারি না। চোখের দিকে তাকাঁলে কলিজা ধুক ধুক করে আর বুকের মাঝে কম্পন তৈরি হয়।

" আল্লাহ খোকা বাবু তুমি আমাকে আপনি করে বলতেছো?

"দেখেন আমি ফিডার খাই না। আমি খোকা বাবু হতে যাব কেন? আমি আদি।

" ও আচ্ছা তা আদি বাবু একটু আমারে দেখো, এত লজ্জা কিসের?

"আপনার চোখকে আমি ভীষন ভয় পাই।

" আমার চোখ কি দেখতে খারাপ?

এরপর ওর দিকে তাকিয়ে বললাম

"না খারাপ হতে যাবে কেন?

কিন্তু এই মেয়েটা বদ মেয়ে ওর দিকে তাকাতেই আমাকে আবার চোখ টিপা মারল।

"আপনার চোখের কোন লাজ শরম নাই? একটা সহজ সরল ছেলেকে এইভাবে দিনের বেলায় চোখ মারতে?

"আদি বাবু তুমি এই গুলা কি বলতেছো আমি একটা মেয়ে। আমার লাজ-শরম থাকবে না কেন?
(Asadur Rahman Hadi) 
এরপর যা হলো আমি কল্পনাও করতে পারি নি। স্পর্শীয়া আমার হাতটা ধরে বলল..

" চলো ফুচকা খেয়ে আসি। আর আমি কি তোমার আন্টি এত আপনি আপনি করে বলতেছো কেন?

আমি ভ্যাবলার মত হা করে শুধু তাকিয়েই থাকলাম। স্পর্শীয়া একটু মিশুক ছিল। খুব তাড়াতাড়ি সবাইকে ফ্রেন্ডলি হিসেবে দেখতো।

কেন জানি আমি ওর উপর আস্তে আস্তে দূর্বল হয়ে পড়ছি তা বুঝতে পারলাম। কিন্তু স্পর্শীয়া শুধু বন্ধু হিসেবে দেখতো। তাই কখনো বলেনি। বন্ধু হিসেবেই কলেজের অধ্যায়টা পার করে দিলাম।

এরপর ও পড়ার জন্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা চলে গেল। মাঝে মাঝে ওর সাথে ফোনে কথা হত। কিন্তু একসময় ওর ফোন নাম্বার সব সময় অফ পেতাম। মানে সিমটা চেইঞ্জ করে ফেলছে।

খুব চিন্তা হতো। কখনো রাত জেগে জেগে ওর কথা ভাবতাম। সারাক্ষন আনমনা হয়ে থাকতাম। ভালোবাসা হয়ত এমনি যখন কাছের মানুষটার সাথে দুইটা কথা না বলা যায় বা দেখা না করা যায় তখন বুকটা ছটফট করে।

ওর সাথে দেখা করার জন্য ঢাকা গেলাম। কিন্তু ওর খোজ মেলেনি। ওর ঠিকানা ভূল ছিল। অনেক খোজঁলাম হ্যাঁ অনেক খোজঁলাম। একবারের জন্য ওর চাদঁবদন খানির সন্ধান পেলাম না।

সাত বছর পর হঠাত্‍ ওর দেখা পেলাম চট্টগ্রামের একটা শপিং এ।

"কেমন আছিস স্পর্শীয়া? জানিস তোকে অনেক খুজেছি।

"হুম ভালো।

স্পর্শীয়া একটু বদলে গেল। আমাকে জিজ্ঞেস করল না আমি ভালো আছি কিনা?

ওর সাথে একটা দু বছরে বাচ্চাকে দেখতে পেলাম। অনেক বড় ধাক্কা খেলাম। নিজেকে সামলাতে পারি নি। চোখ দিয়ে অশ্রু বয়ে গেল। কিন্তু ওকে দেখতে দেই নি।

না পারলাম না ওকে বলতে আমার ভালোবাসার কথাটা বলতে। ওরে শুধু বলেছিলাম তুই যখন ঢাকায় চলে যাচ্ছিলি তখন তোকে একটা গল্পের বই দিয়েছিলাম ওটার ৪৭০ পৃষ্টাটা দেখেছিলি?

" না কি আছে ওই পৃষ্টায়?

"না তেমন কিছু নেই।

এর কয়েকদিন পরে স্পর্শীয়া ঢাকায় চলে গেল। 
আমার বুকের বামপাশে যন্ত্রনার হাহাকার।
হঠাত্‍ রাত ১১টায় ফোন।
ফোনটা রিসিভ করতেই শুনলাম কান্নার আওয়াজ। স্পর্শীয়া কাদঁছে।

"কিরে কাদঁছিস কেন?

"চুপ শয়তান তুই আমার সাথে কথা বলবি না। তুই আস্ত একটা ইতর, গাধা, না তুই একটা হাম্বা।

" কি এমন করলাম আমি?

"চুপ কর হাম্বা কোথাকার ভালোবাসি এই কথাটা মুখে বলা যায় না? কি দরকার ছিল তোর ভালোবাসার কথা চিঠিতে লিখে বইয়ের ভিতর দেওয়ার জন্য? তুই কি আমার হাম্বা হবি?

"কিন্তু এখন তো আর সম্ভব না। তোর যে ছেলে আছে স্বামী আছে।

" হি হি হি তোর কল্লা কেটে ফেলব আমি। হাম্বা কোথাকার ওই দিন যে ছেলেটাকে দেখছিস ওইটা আমার বোনের ছেলে।

"কি বলতেছিস জানিস আমি তোর ছেলে মনে করছি। আচ্ছা আমি তোর হাম্বা হব তবে একটা শর্তে তুই কি আমার গাই হবি?

"হি হি হি ওরে আমার হাম্বারে। প্রপোজ করবি না আমায়?

"হুম।
 এত ভেবে কি হবে ভেবে কে করেছে কি কবে,ভাবছি না আর যা হবে হবার।
এতদিন পারিনি জানো তো আমি এমনি।
বলতে চাই আজ এখনি বলেদি
ভালোবাসি এটুকুই শুধু বলার 
ভালোবাসি তুমি শুনে নাও না
ভালোবাসি ফিরিয়ে দিও না।
ভালোবাসি।

"আমার হাম্বাটাকেও আমি ভালোবাসি।

লিখাঃ Asadur Rahman Hadi.

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চিরসত্য

"আজ তুমি যাকে যেভাবে কষ্ট দিচ্ছো, ঠকাচ্ছো, অবহেলা করছো, ইমোশন নিয়ে খেলতেছো, প্রতারণা করছো। ভেবো না যে তুমি পার পেয়ে যাবে। অতটা সোজা মনে করো না। হঠাৎ কোন একদিন আসবে যেদিন তুমি ঠিক একই ভাবে কারোর দ্বারা কষ্ট পাবে, ঠকে যাবে, অবহেলিত হবে, প্রতারিত হবে। আর সেই দিনটা খুব বেশি দূরে নয়... অপেক্ষায় থেকো!! . জানো তো এই পৃথিবীটা কিন্তু গোল। এখানে তুমি যা করবে, যে অন্যায় করবে, যে পাপ করবে, তা ঠিক ঘুরেফিরে কোন একদিন তোমার কাছে চলে আসবেই। আসতে বাধ্য... তোমার কারণে যদি কারোর চোখ থেকে এই ফোটা পানিও পড়ে যায়, অপেক্ষায় থাকো কেউ একজন তোমার চোখ থেকে শত শত ফোটা পানি পড়ার কারণ হবে!! . দিনের পর দিন যার সাথে ভালোবাসার মিথ্যে অভিনয় করে আসতেছো। একটু একটু করে একটা মানুষের বিশ্বাস নিয়ে মন মতো খেলতেছো। অথচ ও পাশের মানুষটা তোমার ছলনা কিছুই বুঝতে পারেনি, তাই বলে ভেবো না তুমি জিতে গেছো। অপেক্ষা করো একই ভাবে কেউ না কেউ তোমার ভালোবাসা নিয়ে মিথ্যে অভিনয় করে যাবে, তোমার বিশ্বাস নিয়ে খেলবে!! . আমি নিজেও এটা খেয়াল করেছি।  যদি কখনো কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি তো অন্য কোন দিন কেউ একজন তারচেয়েও বেশি খারাপ ব্যবহ

★মিষ্টি ঝগড়া★

- তোমার তো এখানে বসে থাকার কথা ছিলনা!! তবে এখানে কেন বসে আছো? হাদী কে শাসানোর মতো করে কথা গুলো বলতে থাকে অধরা। পাক্কা ১৫ মিনিট ধরে পুরো পার্ক তন্ন তন্ন করে হাদী কে খুজেছে অধরা। দু'জনের দেখা করার কথা ছিলো পার্কের অন্য কোনায় যেখানে অনেক গুলো ফুল গাছ আছে। লাল রঙের ফুল অধরার খুব পছন্দ। হাদী অধরা কে সবসময় লাল রঙের ফুল দিয়েই প্রপোজ করে। পার্কে আসলে যখনই অধরার অভিমান হয় তখন-ই গাছ থেকে একটা লাল ফুল এনে অধরাকে দেয়। আজ সে ধরনের কোনো সুযোগ নেই। অধরার দিকে না তাকিয়েই হাদী জবাব দিতে থাকে। - এখানে অনেক ঘাস আছে তাই বসে আছি। - তুমি কি ছাগল যে ঘাস দেখে বসতে হবে? -আমি ঘাস দেখে বসিনি, ঘাসের উপর বসে আছি। চাইলে তুমিও বসতে পার। - আমি তোমার মত ছাগল না। -আমি জানি তুমি ছাগল না। ছাগলের স্ত্রী লিঙ্গ ছাগী। - কি আমাকে তুমি ছাগী বললে!!!!???? -এখনো বলিনি, তবে ছাগলের বউ ছাগীই হয়। - আমি তোমার বউ না। - আমি তো বলিনি তুমি আমার বউ। - এতো কথা প্যাঁচাও ক্যান? তুমি একটা রামছাগল। - রামছাগলের দাড়ি থাকে। আমি একদম ক্লিন শেভ। - ওহ অসহ্য!!! কেনো যে তোমার মত ইডিয়েটের সাথে প্রেম করি? - আমরা প্রেম করছি না। আমরা

♥ঝগড়াটে মিষ্টি বউ♥

– এই যে মিস্টার বাদাম . কথাটা শুনে বন্ধ মুখ টা হা হয়ে গেলো। পার্কের টুলে বসে বসে বাদাম খাচ্ছি। এমন সময় মেয়েলী কন্ঠে এমন ডাক। এটা নিশ্চই কল্পনার বাইরে। . – এই আমার নাম আছে। আর আপনি অাগন্তুক কোথা থেকে এসে আমাকে মিস্টার বাদাম বলছেন?? – অামি অাপনার নাম জানি না তাই বাদাম খাচ্ছেন দেখে ওটা বললাম। – মাথায় সমস্যা??? – থাকতেও পারে। – ওই অাপনি অামাকে পাগল ভাবছেন?? – হতেও তো পারেন। – অাপনাকে অাপনাকে – কি?? – অামার মাথা। – তো এটা বলতে এরকম করা লাগে?? – ওহহ এই অাপনি কে?? – এতক্ষন যার সাথে ঝগড়া করছেন. – ও মোর খোদা অামারে উঠাই নাও না ক্যান। – দাড়ি বা মই কিছু তো খোদায় দিলো না উঠবেন কি করে?? – অাপনি কি পাবনা থেকে এসেছেন?? – মরতে যাবো পাবনা?? – তো অামাকে মারতে অাসছেন কেন?? – মারতে অাসলে তো সেই কখন মেরে ফেলতাম। – তো কেন এসেছেন?? – অাপনাকে নিতে। – কোথায়?? – পাবনায়। – অাপনার মাথায় সমস্যা অাপনি যান। – অাসুন তো। – কোথায়?? – অামার সাথে। – দেখুন অামার একজনের সাথে দেখা করার কথা। – লাগবেনা সেটা। – অাপনাকে অামি চিনিনা অাপনার সাথে কোথায় যাবো?? – এতক্ষন কথা বলার পরও অচেনা?? – হুমম