যেদিন কলেজে প্রথম যাই সেদিন আমি নিশ্চুপ ছিলাম। তেমন কাউকে চিনি না। প্রথম কয়েকদিন ক্লাস হয়নি। এর কয়েক দিন ঠিকঠাক মত ক্লাস হচ্ছে। আমি একটু লাজুক টাইপের ছিলাম।
হঠাত্ ক্লাস চলাকালীন সময়ে একটা মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে কি যেন করল। মানে চোখ টিপা মারল আরকি। আমি শরমে মাথা নিচু করে ফেললাম। মেয়েটার নাম স্পর্শীয়া।
একদিন ক্যাম্পাসে হেটে যাচ্ছিলাম হঠাত্ হাম্বা বলে ডাক দিল। আমি বামে ডানে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই তার মানে আমিই হাম্বা। আচ্ছা আমি কি গরু? বাসায় এসে নিজের কোমড়ের নিচে তাকিয়ে দেখলাম কই আমার তো লেজ নেই। আমার তো দুইটা শিং নেই তাহলে হাম্বা বলে ডাক দিল কেন? এই মেয়েটা একটা বদ মেয়ে। আমি কত ভদ্র ছেলে আর আমাকে হাম্বা বলে।
এরপর থেকে স্পর্শীয়াকে দেখলেই নিজেকে আড়াল করে রাখতাম। কিন্তু মেয়েটার সামনে কিভাবে যেন হাজির হয়ে যেতাম। এবার আমাকে রামছাগল বলে ডাকল। আমি মাথা নিচু করে বললাম আপনি আমাকে দেখলে এই রকম করেন কেন? মাথা নিচু করে এজন্যই বললাম মেয়েদের চোখের দিকে তাকাতে পারি না। চোখের দিকে তাকাঁলে কলিজা ধুক ধুক করে আর বুকের মাঝে কম্পন তৈরি হয়।
" আল্লাহ খোকা বাবু তুমি আমাকে আপনি করে বলতেছো?
"দেখেন আমি ফিডার খাই না। আমি খোকা বাবু হতে যাব কেন? আমি আদি।
" ও আচ্ছা তা আদি বাবু একটু আমারে দেখো, এত লজ্জা কিসের?
"আপনার চোখকে আমি ভীষন ভয় পাই।
" আমার চোখ কি দেখতে খারাপ?
এরপর ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
"না খারাপ হতে যাবে কেন?
কিন্তু এই মেয়েটা বদ মেয়ে ওর দিকে তাকাতেই আমাকে আবার চোখ টিপা মারল।
"আপনার চোখের কোন লাজ শরম নাই? একটা সহজ সরল ছেলেকে এইভাবে দিনের বেলায় চোখ মারতে?
"আদি বাবু তুমি এই গুলা কি বলতেছো আমি একটা মেয়ে। আমার লাজ-শরম থাকবে না কেন?
(Asadur Rahman Hadi)
এরপর যা হলো আমি কল্পনাও করতে পারি নি। স্পর্শীয়া আমার হাতটা ধরে বলল..
" চলো ফুচকা খেয়ে আসি। আর আমি কি তোমার আন্টি এত আপনি আপনি করে বলতেছো কেন?
আমি ভ্যাবলার মত হা করে শুধু তাকিয়েই থাকলাম। স্পর্শীয়া একটু মিশুক ছিল। খুব তাড়াতাড়ি সবাইকে ফ্রেন্ডলি হিসেবে দেখতো।
কেন জানি আমি ওর উপর আস্তে আস্তে দূর্বল হয়ে পড়ছি তা বুঝতে পারলাম। কিন্তু স্পর্শীয়া শুধু বন্ধু হিসেবে দেখতো। তাই কখনো বলেনি। বন্ধু হিসেবেই কলেজের অধ্যায়টা পার করে দিলাম।
এরপর ও পড়ার জন্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা চলে গেল। মাঝে মাঝে ওর সাথে ফোনে কথা হত। কিন্তু একসময় ওর ফোন নাম্বার সব সময় অফ পেতাম। মানে সিমটা চেইঞ্জ করে ফেলছে।
খুব চিন্তা হতো। কখনো রাত জেগে জেগে ওর কথা ভাবতাম। সারাক্ষন আনমনা হয়ে থাকতাম। ভালোবাসা হয়ত এমনি যখন কাছের মানুষটার সাথে দুইটা কথা না বলা যায় বা দেখা না করা যায় তখন বুকটা ছটফট করে।
ওর সাথে দেখা করার জন্য ঢাকা গেলাম। কিন্তু ওর খোজ মেলেনি। ওর ঠিকানা ভূল ছিল। অনেক খোজঁলাম হ্যাঁ অনেক খোজঁলাম। একবারের জন্য ওর চাদঁবদন খানির সন্ধান পেলাম না।
সাত বছর পর হঠাত্ ওর দেখা পেলাম চট্টগ্রামের একটা শপিং এ।
"কেমন আছিস স্পর্শীয়া? জানিস তোকে অনেক খুজেছি।
"হুম ভালো।
স্পর্শীয়া একটু বদলে গেল। আমাকে জিজ্ঞেস করল না আমি ভালো আছি কিনা?
ওর সাথে একটা দু বছরে বাচ্চাকে দেখতে পেলাম। অনেক বড় ধাক্কা খেলাম। নিজেকে সামলাতে পারি নি। চোখ দিয়ে অশ্রু বয়ে গেল। কিন্তু ওকে দেখতে দেই নি।
না পারলাম না ওকে বলতে আমার ভালোবাসার কথাটা বলতে। ওরে শুধু বলেছিলাম তুই যখন ঢাকায় চলে যাচ্ছিলি তখন তোকে একটা গল্পের বই দিয়েছিলাম ওটার ৪৭০ পৃষ্টাটা দেখেছিলি?
" না কি আছে ওই পৃষ্টায়?
"না তেমন কিছু নেই।
এর কয়েকদিন পরে স্পর্শীয়া ঢাকায় চলে গেল।
আমার বুকের বামপাশে যন্ত্রনার হাহাকার।
হঠাত্ রাত ১১টায় ফোন।
ফোনটা রিসিভ করতেই শুনলাম কান্নার আওয়াজ। স্পর্শীয়া কাদঁছে।
"কিরে কাদঁছিস কেন?
"চুপ শয়তান তুই আমার সাথে কথা বলবি না। তুই আস্ত একটা ইতর, গাধা, না তুই একটা হাম্বা।
" কি এমন করলাম আমি?
"চুপ কর হাম্বা কোথাকার ভালোবাসি এই কথাটা মুখে বলা যায় না? কি দরকার ছিল তোর ভালোবাসার কথা চিঠিতে লিখে বইয়ের ভিতর দেওয়ার জন্য? তুই কি আমার হাম্বা হবি?
"কিন্তু এখন তো আর সম্ভব না। তোর যে ছেলে আছে স্বামী আছে।
" হি হি হি তোর কল্লা কেটে ফেলব আমি। হাম্বা কোথাকার ওই দিন যে ছেলেটাকে দেখছিস ওইটা আমার বোনের ছেলে।
"কি বলতেছিস জানিস আমি তোর ছেলে মনে করছি। আচ্ছা আমি তোর হাম্বা হব তবে একটা শর্তে তুই কি আমার গাই হবি?
"হি হি হি ওরে আমার হাম্বারে। প্রপোজ করবি না আমায়?
"হুম।
এত ভেবে কি হবে ভেবে কে করেছে কি কবে,ভাবছি না আর যা হবে হবার।
এতদিন পারিনি জানো তো আমি এমনি।
বলতে চাই আজ এখনি বলেদি
ভালোবাসি এটুকুই শুধু বলার
ভালোবাসি তুমি শুনে নাও না
ভালোবাসি ফিরিয়ে দিও না।
ভালোবাসি।
"আমার হাম্বাটাকেও আমি ভালোবাসি।
লিখাঃ Asadur Rahman Hadi.