- কি রান্না করছো এইগুলো?? এসব মানুষ খায়???
কি শিখছো জীবনে??? এখনও রান্নাও করতে
পারোনা... যত্তসব!!!!
"এমনি আনলিমিটেড ভাবে ওকে কথাগুলো
বললাম.....আসলে রান্নাটা অনেক ভালো হইছে
কিন্তু আজকে ওর অভিমানী মুখটা দেখতে খুব
ইচ্ছে হলো, তাই ইচ্ছে করেই এসব বলছি.....
- এভাবে বলছো কেন?? আমিকি ইচ্ছে করে এমন করছি?
- আমি কি জানি? করতেও পারো
- তুমি এই কথাটা বলতে পারলে?( কান্নাজড়িত কন্ঠে )
- হ্যা পারলাম, কারন প্রতিদিন তোমার হাতের
এসব বাজে খাবার আর ভালো লাগেনা।
- তার মানে আমার রান্না তোমার কাছে কখনও ভালো লাগেনি?? ( এখনি কেদে দিবে মনে হয় )
- না লাগেনি, তুমি খাও এসব আমি গেলাম....
কিছুসময় পর কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম।
বুঝলাম নিলাম্ভরি কাদছে। ও হ্যা পরিচয়টাইতো
দেওয়া হয়নি, আমি আদি। আমার বউ তাহমিনা,
আদর করে নিলাম্ভরি ডাকি। আমাদের বিয়ে
হয়েছে আজকে ৬মাস। বিয়ের আগে প্রেম করলেও পারিবারিক ভাবেই আমাদের বিয়েটা সম্পন্ন হয়। খুব সুখেই আছি দুজন।
ঐদিকে ও কান্না করেই চলছে। আমিও চাই কাদুঁক,
কাঁদতে কাঁদতে যেন ওর অভিমানের মাত্রা ১০০০ বোল্টের হয়.....
যাইহোক রাতে আর খাওয়া হয়নি। জানি
পাগলিটাও খায়নি....হঠাৎ কান্নার আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেল, একটুপর ই রুমে আলো জ্বলো উঠলো,
বুঝলাম আমার বউ রুমে এসেছে....
ওর দিকে তাকাতেই একটা শক খেলাম, এ কি!!!!!
কাঁদতে কাঁদতে চোখ দুটা লাল হয়ে গেছে..কিছুটা ফুলেও গেছে। আমার দিকে একবার তাকাল তারপর আর কিছু না বলেই বালিশ নিয়ে অন্য রুমে চলে গেল (এটা ওর অভ্যাস অভিমান করলেই অন্যরুমে চলে যাবে )।
আমি বাধা দেইনি বলে হয়তো অনেকটা কষ্ট
পেয়েছে....আমিও
এখন রাত ১টা। সুনসান নীরবতা, কোথাও কোন শব্দ নেই। শুধুমাত্র ঝিঁঝিঁপোকার ডাকগুলো কানে আসছে। পাগলিটাও অনেক সময় ধরে কেদে ঘুমিয়ে গেছে। জেগে আছি একমাত্র আমি.....
নাহ, কাজটা বোধহয় ঠিক হয়নি, শুধু শুধু ওকে এতো কষ্ট দেওয়া উচিত হয়নি, পাগলিটা কতো কষ্ট করে আমার জন্য। সকাল হলেই নাস্তা তৈরি করে,
তারপর সংসারের সব কাজ। আবার দুপুরের রান্না,
আবার কাজ, আবার রাতের জন্য খাবার তৈরি করা, সব মিলিয়ে খুব কষ্ট করে আমার জন্য।
শুধুমাত্র আমার জন্যই ও ওর সব কিছু ছেড়ে চলে এসেছে, আর আমি ওকে শুধু কষ্ট দিলাম!!!!
নিজের কাছেই নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে....
নাহ যাই পাগলিটাকে নিয়ে আসি গিয়ে....
এখন আমি ওর রুমে। দরজা লক করেনি, বউ আমার হয়তো জানে আমি আসবো।
ওর মুখের দিকে তাকাতেই খুব কষ্ট হলো, আসলেই পাগলিটা অনেক কেদেছে। গাল দুটা লাল হয়ে আছে, চোখ ফুলে আছে, ওর কতগুলা চুল কপালে এসে রয়েছে, দেখেই
ইচ্ছে হলো চুলগুলা সরিয়ে দিতে.....
তাই আস্তে আস্তে ওর কাছে গেলাম, বুঝতে
পারলাম ও সত্যিই ঘুমিয়ে আছে। আলতো করে ওর নাকটা ছুয়ে দিলাম, তারপর কপাল থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিলাম.....
ইচ্ছে ছিল জাগিয়ে আমার রুমে নিয়ে যাওয়ার,
তারপর আবার ভাবলাম অনেক ক্লান্ত ও, এখন একটু ঘুমাক। তাই আলতো করে ওর কপালে একটা আদর দিয়ে চলে আসতে যাবো.....এমন সময় ও পিছন থেকে আমার হাত টেনে ধরলো....
(সেরেছে রে...তার মানে পাগলিটা জেগেই
ছিল )
- কি ব্যাপার, এখানে আসছেন কেন?
- আসলে ঘুম আসছিলোনা, তাই একটু ছাদে
গেছিলাম। আসার সময় দেখলাম রুমটা খুলা, তাই দেখতে এলাম কে আছে।
- তো কাউকে দেখতে এলে আদর করতে হয়?
- নাহ, কিন্তু এতো নিস্পাপ মুখটা দেখে আদর না করে পারলাম না....( অনুভব করলাম আমার হাতটা ও অনেক শ্ক্ত ভাবে ধরে আছে, মনে হচ্ছ জীবন দিয়ে দিবে তাও আমার হাত ছাড়বেনা )
- আমাকে কষ্ট দিতে খুব ভালো লাগে তোমার, তাইনা???
- কি বলছো বাবুনি, একদম ই না, তোমাকে কষ্ট দিলে যে আমিও কষ্ট পাই
- হুম জানি, এখন আর আমাকে আগের মতো ভালোবাসনা।
- আমার বাবুইপাখি এইটা তুমি কি বলছো,
তোমাকে আমি অনেএএএএক ভালোবাসি...
- মিথ্যে কথা, ভালোবাসলে আমাকে এভাবে কষ্ট দিতে পারতে নাকি??
- সরি আমার বাবুনিটা, আর হবেনা...
- এই আমার হাত ধরে আছো কেন?? হাত ছাড়ো... (কতো বড় চালাকরে বাবা..ও নিজে আমার হাত ধরে আছে আর বলছে আমি হাত ছেড়ে দিতে )
- ঠিক আছে ছেড়ে দিচ্ছি, এই বলে আমার বাম হাত দিয়ে ওর হাতটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
আর বললাম....
- বাবুনি তুমি আমার কে জানো?? কারো শূন্যতায় যখন আমার বুকটা একটু পরপর হু হু করে উঠে।
আমার সেই শূন্যতার মাঝেই তুমি আছো। কাউকে হারানোর ভয়ে গভীর রাতে যখন হঠাৎ জেগে যাই, অতঃপর আমার অজান্তেই চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে, আমার সেই অশ্রুর মাঝেই তুমি আছো। আমার অস্তিত্বটাই তুমি বাবুনি।
তুমি ছাড়া যে আমি সেই চাঁদের ন্যায় যার কোন স্নিগ্ধতা নেই। আমি সেই ফুলের মতো যার ঘ্রান নেই। আমি সেই নদীর মতো যার কোন স্রোত নেই।
আমি তোমাতে তুমি আমাতে, দুজন মিলে
দুজনাতে হারিয়ে যেতে চাই। তুমি কি আমাকে সেই সুযোগটা দিবে বাবুনি??
কথাটা শেষ করার সাথে সাথেই পাগলিটা হু হু করে কেদেঁ দিল.....আর সোজা আমার বুকে চলে আসল আর বললো...
- দেবো তো, অবশ্যই দেব, তুমিইতো আমার সব, শুধু তুমি আমকে কখনও ছেড়ে যেওনা প্লীজ....
- যাবোনা তো বাবুনি, কখনও না।
- তুমি আমাকে যতো ইচ্ছে কষ্ট দাও, আমাকে
আঘাত করো, আমি কিচ্ছু বলবোনা। শুধু দিনের শেষে একবার বলো "ভালোবাসি পাগলি" আমি আর কিচ্ছু চাইনা.....
কথাটা শুনে আমি আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি, আমিও কেদে দিলাম আর বললাম...
-আর কষ্ট দেবো না আমার পাগলিটাকে, এখন থেকে সবসময় আদর করবো।
- ঠিকতো?
- হুম আমার জান, একদম ঠিক৷
- প্রমিস করো আমাকে আর কষ্ট দিবানা?
- এই যে প্রমিস করলাম, আর কখনও তোমাকে কষ্ট দেবো না, এবার কান্না থামাও প্লীজ.....
- হুমম, আর যদি কষ্ট দিছো না.....
- দেবো না তো পাগলি, এখন চলো।
- কোথায়?
- রুমে
- আমি হাঠতে পারবোনা ( বুঝলাম এখন উনার সেবা করতে হবে )
- তাতে কি হইছে? তোমার বাবুটা আছেনা? এই বলে ওকে আমার কোলে তুলে নিলাম...
"পাগলিটাও আমর গলা জড়িয়ে ধরে, আর বলতে থাকে....
- বাবু? খুব কষ্ট হচ্ছে..না?? রুমে আসো
তোমার পাওনা দিয়ে দেব....
অতঃপর পাগলিকে নিয়ে রুমে চলে গেলাম।
তারপর.......
লিখাঃ Asadur Rahman Hadi.