অফিসে যাওয়ার সময় পাশের ওই মহিলা কলেজের গেটের সামনে গিয়ে একটু রিক্সাটা থামালাম। থামিয়ে গেটের ভেতর দিয়ে একটু চোখ মেলে তাকালাম, তাহমিনা গেটের কাছে আছে নাকি, তাই ওকে একটু দেখার জন্য।
আমি আদি, একটা জব করি। মা বাবার সাথে বাসায়ই থাকি আর বাসায় থেকেই জব করি।
.
আর তাহমিনা হলো একটা মেয়ে, যাকে আমি পছন্দ করি। প্রথম যেদিন জব করতে অফিসে যাই সেদিন যাওয়ার সময় কলেজের সামনে ওকে দেখি আর তখনই ভালো লেগে যায়। তাই প্রতিদিন যাওয়ার সময় কলেজের ভেতর দিকে একটু উকি দিয়ে যাই, ওকে দেখার জন্য।
.
ওর বেশী কিছু পরিচয় জানি না, শুধু নামটা জানতে পেরেছি। রাস্তা থেকে কলেজের ভেতরে অনেক কিছু দেখা যায় অনেক ভেতর পর্যন্ত। আর তাহমিনা দেখতে অনেক সুন্দর কিন্তু আমি অতটা সুন্দর না, একটু শ্যামলা ধরনের। তাই কখনো ভালবাসার দাবি নিয়ে ওর সামনে যাইনি।
.
যদি আমাকে ওর পছন্দ না হয়, যদি ফিরিয়ে দেয়, তখন শুধু কষ্ট ছাড়া আর কিছু পাবো না, তার থেকে ভালো ওকে দূর থেকেই দেখে যাই। তাই আমি আমার মতো থাকি কখনো ওর সামনে ওর সাথে কথা বলতে যাইনি। যদি কিছু বলে, তখন শুধু শুধু অপমানিত হবো।
.
অফিসে যাওয়ার সময় একেক দিন ওকে দেখতে পাই আবার কোনো দিন দেখতে পাইনা। কারণ, যেদিন গেটের কাছে বা মাঠে না থাকে সেদিন দেখতে পাই না আর যেদিন এর কাছে থাকে সেদিন দেখতে পাই।
.
ওকে পছন্দ করি বা ভালবাসি প্রায় চারমাস হলো। কিন্তু কখনো ওর সামনে যাইনি শুধু দূর থেকেই দেখে গেছি, কারণ ওর সাথে আমার মানায় না।
.
তারপর কয়েক দিন পর,,,
- আদি শুনো,
- হ্যাঁ, বাবা বলো,
- অনেক তো হলো, চাকরি করতে শুরু করছো, এখন একটা বিয়ে করে নাও।
- এখনই?
- সেটা তুমি সিন্ধান্ত নাও।
- আচ্ছা,
.
ঘরে বসে বসে ভাবছি কি করবো? তাহমিনার কথা কি বলবো বাবাকে? না থাক ওর যদি আমাকে পছন্দ না হয়,,
.
তার পরের দিন, অফিসে যাওয়ার সময় আবার কলেজের সামনে এসে দাড়ালাম, ওকে দেখার জন্য গেটের সামনে গিয়ে ভেতরে উকি দিলাম কিন্তু আজ দেখতে পেলাম না,, তাই আর একটু ভালো করে ভেতরে তাকালাম। হটাৎ পেছন থেকে কে যেন ডাক দিল,,
.
- ভাইয়া কাউকে খুঁজছেন?
- হ্যাঁ ইয়ে মানে না,, ( তাহমিনাই আসছে পেছন দিয়ে)
- বুঝতে পারলাম না কি বলছেন?
- না এমনি কিছু না,
- ওহ্,
- আসি এখন,
- কিন্তু আমি দেখলাম আপনি ভেতরে উকি দিয়ে কাউকে খুঁজছেন।
- এমনি দেখছিলাম একটু "
- তাহলে ভেতর গিয়েই দেখতেন, বাইরে দাড়িয়ে থেকে দেখছেন কেন?
- এটাও তো ঠিকই, কিন্তু আমি তো আর এই কলেজের ছাত্র না, আমি জব করি।
- তাহলে এখানে কি খুঁজছেন?
- কিছু না, আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে আমি আসি।
.
তারপর ওখান থেকে অফিসে চলে গেলাম। জোর বাচা বেচে গেলাম, খুব ভয় করছিল ওর সাথে কথা বলতে। কিন্তু হটাৎ করে ও আসলো কোথা থেকে, অন্য কেউ না এসে ও আসলো কেন? আর কেউ ছিলো না কলেজে? অফিসে বসে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।
.
না এভাবে আর চলবে না,,এর একটা শেষ হওয়া চাই, আর ওর পেছনে না যাওয়াই ভালো হবে। ওর মতো মেয়ে আমার কপালে নেই। ও একটা পরীর মতো আর আমি কই, আমার ওর চিন্তা করা মানায় না।
ওর মুখটা দেখার জন্য আর কলেজের সামনে না যাওয়াই ভালো হবে।
.
ওকে পাব না, আর হটাৎ করে ও সামনে এসে পড়লে আরও ভয় হয়, আত্মা ধুকপুক করে, তাই আর যাব না, বামন হয়ে চাদেঁ হাত দেওয়ার ইচ্ছা আমার নেই। আমার ভালবাসা আমি আমার মাঝেই পোষণ করে রাখি।
.
কয়েক দিন পর,,,
.
আজকে অফিস বন্ধ তাই একটু ঘুরতে বের হইছি এলাকার আশেপাশে। হেটে হেটেই যাচ্ছি, রাস্তার পাশ দিয়ে, রাস্তার দুইপাশে বড় বড় গাছ তাই ঠান্ডা ছায়া আছে সবখানে, হাটতে ভালো লাগে এমন জায়গায়। তাই হাটতে হাটতে ঘুরে বেড়াচ্ছি।
.
আমার এলাকা ছেড়ে একটু পাশের এলাকায় চলে গেলাম। কাচাঁ রাস্তায় এসে পড়ছি তাই গাড়ির ভয় নেই, পকেটে থেকে হেডফোন বের করে কানে দিলাম।
গান শুনতে শুনতে এগিয়ে যাচ্ছি সামনের দিকে, অনেক সময় পর, কে যেন পেছন থেকে হেডফোনের তার ধরে টান দিল,,
.
- এই কথা কানে যায় না।
- আপনি এখানে?
- এটা আমার এলাকা, আমি থাকবো না তো কে থাকবে?
- এ বাবা, আমি তো জানিই না এটা আপনার নিজের কেনা এলাকা।
- দেখুন ফালতু বকবক করবেন না, আপনি সেদিন কলেজে গেছিলেন কেন?
- আপনার নাম তাহমিনা?
- বলতে বাধ্য নই।
- আমাকে চিনেন?
- না,
- তাহলে আমার হেডফোন ধরে টান দিলেন কেন? জানেন না অপরিচিতদের সাথে ভদ্র ভাবে ব্যবহার করতে হয়?
- কিন্তু আপনার চোখ ট্যারা আপনাকে কখন থেকে বলছি এখান দিয়ে না আসতে তবুও আসলেন কেন? আর ওগুলো দেখতে পাননি?
- কি?
- ওইযে রাস্তার পাশে কবুতর গুলো ছিলো।
- হ্যাঁ, দেখছি তো।
- আরে ওখানে ফাদ পেতে ছিলাম ওগুলো ধরার জন্য, কিন্তু আপনি ওখান দিয়ে গিয়ে সুতো গুলো নষ্ট করে দিছেন,,
- ও স্যরি, বুঝতে পারিনি। কানে হেডফোন আর সাউন্ড বেশী ছিলো তো তাই।
- তার জন্যই তো বাধ্য হলাম ওটা টান দিতে আর আমাকে বলছেন ভদ্রতা শিখতে।
- স্যরি স্যরি, আমারই ভুল হইছে, আমার উচিত হয়নি এভাবে রাস্তা দিয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে চলার।
- হু, যান এখন এখান থেকে।
- আপনার বাসাটা কোনটা?
- ওইযে ওইটা ( হাত দিয়ে একটা দেখিয়ে দিল)
- আচ্ছা আসি।
- যান,,
.
তারপর ওখান থেকে এসে পড়লাম। আজও হটাৎ করে সামনে এসে পড়লো আর আমি জানতামও না ওর বাসা এখানে। ওর সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম ও একটু রাগি। একটু শুধু ফাদ নষ্ট করছি তাতেই অপরিচিত না মেনেই হেডফোন ধরে টান দিছে, এতে ওর রাগি ভাবটাই প্রকাশ পেল।
.
কিন্তু আজ বেশী আমার ভয় লাগছিল না, যখন পেছনে তাকিয়ে ওকে দেখলাম ওই আমার হেডফোন ধরে টান দিছে তখন একটু ভয় পেয়েছিলাম কিন্তু কিছুক্ষণ পরই আজ ভয়টা পালিয়ে গেল। আজ তো ভয় করবেই না, কারণ, আমি তো আর ওর সপ্ন দেখি না তাই ভয়টাও ছুতে পারেনি।
.
কয়েক দিন পর,,
.
- আদি বাবা এবার তো ঘরে বউ আন,
- আচ্ছা বাবা তোমরা যা ভালো বুঝো তাই করো।
- আচ্ছা পরশু রেডি হয়ে থাকিস পাশের এলাকায় আমার বন্ধুর মেয়েকে দেখতে যাব।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
.
.
আজ যাব মেয়ে দেখতে, দেখি কেমন হয়। কি জুটে আমার কপালে। দেখি আমার মতো ছেলেকে কে বিয়ে করতে রাজি হয়। চেহারাটা একটু খারাপ কিন্তু আর সবকিছু ঠিক আছে।
.
তারপর মেয়ের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হলাম। সেদিন প্রায় এখানেই আসছিলাম। তাহমিনাদের বাড়ি থেকে একটু দূরে। তাহমিনা যে বাড়িটা সেদিন দেখিয়ে ছিলো সেটা পেছনে ফেলে আসলাম। এখন একটু ভেতর দিকে যাচ্ছি। সেদিন তাহমিনার ইশারা দিয়ে দেখানো বাড়িটা শুধু দূর থেকে দেখে গিয়েছিলাম। কাছে যাইনি, কিন্তু আজ তাহমিনা কে ছেড়ে ওর পাশের বাড়িতে আসলাম মেয়ে দেখতে।
.
কিছু সময় বসে থাকার পর মেয়ে আনা হলো সামনে। ঘোমটা সরাতেই আমার বেহুঁশ হবার অবস্থা, এটা তো আর কেউ না, তাহমিনা।
সবার দেখার পর বললাম, আমি একটু ওর সাথে কথা বলতে চাই। এরপর তাহমিনার মা এসে আমাদের দুজনকে ছাদে পাঠিয়ে দিল।
.
- আপনার নামই তাহলে তাহমিনা?
- হুম।
- স্যরি,
- কেন?
- আমি বুঝতে পারিনি এটা আপনার বাসা, আর বাবা বলছিল ওনার বন্ধুর বাসায় যাবে তাই আসছিলাম, নয়তো আসতাম না।
- কেন? আমাকে পছন্দ হয়নি?
- না সেটা না, কিন্তু আপনি সেদিন ভুল ঠিকানা দিছিলেন কেন?
- হিহিহি, এমনি। এবার বলুন আপনার কি আমাকে ভালো লাগেনি।
- ঠিক তা নয়, আপনার বয়ফ্রেন্ড আছে?
- হটাৎ এ কথা কেন?
- আপনার মতো মেয়ের বয়ফ্রেন্ড থাকাটা স্বাভাবিক তাই বললাম,
- জ্বী, আমার বয়ফ্রেন্ড নেই, আমাদের ইসলামিক ধর্ম মতে প্রেম করা নিষেধ, তবুও এটা এখন কেউ মানে না কিন্তু আমি অন্যদের মতো না, আমি প্রেমে বিশ্বাসী না, আমি বিয়ের পর আমার স্বামীকেই ভালোবাসবো। বিয়ের আগে অন্য কাউকে না, কারণ, সে ভালবাসা সারাজীবন থাকার নিশ্চয়তা নেই, ভেঙে যাওয়ার সম্ভবনা বেশী।
- ঠিকই বলছেন।
- কেন আপনার কি আমাকে ভালো লাগেনি?
- আমার তোমাকে ভালো লাগবে এটা স্বাভাবিক ব্যপার। কারণ সবদিক দিয়ে তুমি অনেক ভালো কিন্তু আমাকে তোমার পাশে ভালো দেখায় না, কারণ আমি এতটা সুন্দর না, তোমার আমাকে ভালো নাও লাগতে পারে।
- উফফফ,, এই কথা,, আপনি না হয় একটু কালো তাতে কি হইছে, আমি বলছি নাকি আমার আপনাকে পছন্দ হয়নি,,!!!
- না।
- তাহলে বললেন কেন?
- কারণ আমি তো এতদিন ধরে এটাই ভেবে আসছি।
- মানে!!!
- না, কিছু না।
- তো এবার আমাকে বিয়ে করবেন তো।
- হ্যাঁ,,
- আর হ্যাঁ আমি কিন্তু আপনাকে অনেক ভালোবাসবো আপনিও কিন্তু আমাকে অনেক ভালবাসবেন।
- একটা সত্যি কথা বলবো?
- বলেন,
- আমি তোমাকে অনেক আগে থেকেই ভালবাসি। সেদিন কলেজে তোমাকে দেখতেই গেছিলাম। শুধু সেদিন না, প্রতিদিনই তোমাকে দেখতে গেটের সামনে গিয়ে দাঁড়াতাম।
- কোনো দিন বলেন নাই কেন?
- ভয় করতো খুব।
- কিসের ভয়?
- আমাকে তো তোমার সাথে বেশী ভালো দেখায় না তাই তুমি যদি কিছু মাইন্ড করো তার জন্য।
- আপনি একটা গাধা,
- কেন?
- যাকে ভালবাসেন তাকে ভালবাসার কথা বলতে সমস্যা কই, হোক সে আপনার সাথে মানায় না তবুও তাকে বলা দরকার, আপনার মনের ফিলিংস তো জানাবেন। তারপর যা হবার হবে। ভালবাসা চেহারা দেখে হয় না, ভালবাসা মন থেকে হয়।
আর আমিও তো এখন আপনাকে অনেক ভালবাসবো। আমি তো আর আপনার চেহারা দেখে আপনাকে ভালবাসছি না, আমি আপনার ওই সুন্দর মনটাকে ভালবাসছি, বুঝতে পারছেন?
- বুঝলাম,,
- আপনার নাম যেন কি?
- আদি,
- বাহ্ খুব সুন্দর নাম, এবার আমাকে বিয়ে করবেন তো?
- না করার কি আছে, আমি তো আগেই ভালবাসি।
- হুম, নিচে চলুন
- আচ্ছা।
.
তারপর বাড়ি এসে পড়লাম।
.
কয়েক দিন পর,,
বিয়ে করে নতুন বউ বাড়িতে আনলাম বাবার কথা মতো। তবে যাকে ভালবাসি তাকেই এনেছি বউ করে।
ঘরে যাওয়া মাত্রই খাট থেকে এসে সালাম করলো,, তারপর আবার জায়গা মতো বসে পড়লো। রাত ১১ টা বাজে তখন
.
- কি হলো ওখানে দাড়িয়ে আছেন কেন?
- না মানে এমনি,
- এখানে এসে বসুন।
- এইতো আসছি, তোমার জন্য একটা জিনিস আনছি,
- কি?
- এই আংটি তোমার, এটা আমার পছন্দ অনুযায়ী তৈরি করছি।
- পড়িয়ে দেন,
- নাও দিলাম,
- চলুন না একটা ছাদে যাই।
- এখন ছাদে?
- চলুন না প্লিজ প্লিজ,
- আচ্ছা চল,
আমার অপ্রকাশিত ভালবাসা আজ প্রকাশ পেল।
.
রাত ১১:১৫
ছাদে বসে আছি, আর তাহমিনা আমার পাশে বসে আছে, দুজনে চাদঁ দেখছি """" আর ভাবছি যা হলো এটা কি সপ্ন না বাস্তব.! আমি তাহলে এতদিন ভুল ভাবতাম, সুন্দর সবাই হতে পারে কিন্তু অহংকারী সবাই হয় না।
আমাদের দেশে অনেক মেয়েই আছে যারা নিজের সুন্দর রুপ নিয়ে অহংকার দেখায়। নিজে সুন্দর বলে অন্যদের সাথে মিশে না ক্লোজ ভাবে। তারা তাদের রুপকে এঞ্জেলের সাথে তুলনা করে। প্রমাণ হলো, ফেসবুক। ওখানেই তারা তাদের রুপ নিয়ে যথেষ্ট অহংকার দেখায়।
.
কিন্তু এমন মেয়ে খুব কমই আছে যারা নিজের চেহারা নিয়ে অহংকার করে না। যেমন গল্পের তাহমিনা। ভাবছিলাম ও অন্যদের মতো অহংকার দেখাবে ওর রুপ নিয়ে, তাই কোনো দিন ওকে নিজের ভালবাসার কথা বলিনি। কিন্তু আমার ভুল ধারণাটা ভেঙে গেল যখন ওর সাথে ফ্রী হয়ে কথা বলতাম।
.
ও ওর চেহারা নিয়ে ততটা ভাবে না বা অহংকার নেই, ও শুধু ধর্ম অনুসরণ করে নিজের স্বামীকে ভালবাসবে কোনো সুন্দর হিরো কে নয়। ভালবাসতে গেলে চেহারা নয় মন লাগে।
যেটা সবার থাকে না, এখন থাকে শুধু টাকা আর চেহারার অহংকার।
.
ভালবাসলে মন থেকেই ভালবাসতে হবে, কোনো কিছুর বিনিময়ে না। যেমন, তাহমিনা এখন আমাকে ভালবাসে আমার সুন্দর চেহারা ছাড়াই। তেমনই অহংকার ছাড়া ভালবাসতে হবে।
এটাই ছিলো আমার অপ্রকাশিত ভালবাসা।
লিখাঃ Asadur Rahman Hadi.
আমি আদি, একটা জব করি। মা বাবার সাথে বাসায়ই থাকি আর বাসায় থেকেই জব করি।
.
আর তাহমিনা হলো একটা মেয়ে, যাকে আমি পছন্দ করি। প্রথম যেদিন জব করতে অফিসে যাই সেদিন যাওয়ার সময় কলেজের সামনে ওকে দেখি আর তখনই ভালো লেগে যায়। তাই প্রতিদিন যাওয়ার সময় কলেজের ভেতর দিকে একটু উকি দিয়ে যাই, ওকে দেখার জন্য।
.
ওর বেশী কিছু পরিচয় জানি না, শুধু নামটা জানতে পেরেছি। রাস্তা থেকে কলেজের ভেতরে অনেক কিছু দেখা যায় অনেক ভেতর পর্যন্ত। আর তাহমিনা দেখতে অনেক সুন্দর কিন্তু আমি অতটা সুন্দর না, একটু শ্যামলা ধরনের। তাই কখনো ভালবাসার দাবি নিয়ে ওর সামনে যাইনি।
.
যদি আমাকে ওর পছন্দ না হয়, যদি ফিরিয়ে দেয়, তখন শুধু কষ্ট ছাড়া আর কিছু পাবো না, তার থেকে ভালো ওকে দূর থেকেই দেখে যাই। তাই আমি আমার মতো থাকি কখনো ওর সামনে ওর সাথে কথা বলতে যাইনি। যদি কিছু বলে, তখন শুধু শুধু অপমানিত হবো।
.
অফিসে যাওয়ার সময় একেক দিন ওকে দেখতে পাই আবার কোনো দিন দেখতে পাইনা। কারণ, যেদিন গেটের কাছে বা মাঠে না থাকে সেদিন দেখতে পাই না আর যেদিন এর কাছে থাকে সেদিন দেখতে পাই।
.
ওকে পছন্দ করি বা ভালবাসি প্রায় চারমাস হলো। কিন্তু কখনো ওর সামনে যাইনি শুধু দূর থেকেই দেখে গেছি, কারণ ওর সাথে আমার মানায় না।
.
তারপর কয়েক দিন পর,,,
- আদি শুনো,
- হ্যাঁ, বাবা বলো,
- অনেক তো হলো, চাকরি করতে শুরু করছো, এখন একটা বিয়ে করে নাও।
- এখনই?
- সেটা তুমি সিন্ধান্ত নাও।
- আচ্ছা,
.
ঘরে বসে বসে ভাবছি কি করবো? তাহমিনার কথা কি বলবো বাবাকে? না থাক ওর যদি আমাকে পছন্দ না হয়,,
.
তার পরের দিন, অফিসে যাওয়ার সময় আবার কলেজের সামনে এসে দাড়ালাম, ওকে দেখার জন্য গেটের সামনে গিয়ে ভেতরে উকি দিলাম কিন্তু আজ দেখতে পেলাম না,, তাই আর একটু ভালো করে ভেতরে তাকালাম। হটাৎ পেছন থেকে কে যেন ডাক দিল,,
.
- ভাইয়া কাউকে খুঁজছেন?
- হ্যাঁ ইয়ে মানে না,, ( তাহমিনাই আসছে পেছন দিয়ে)
- বুঝতে পারলাম না কি বলছেন?
- না এমনি কিছু না,
- ওহ্,
- আসি এখন,
- কিন্তু আমি দেখলাম আপনি ভেতরে উকি দিয়ে কাউকে খুঁজছেন।
- এমনি দেখছিলাম একটু "
- তাহলে ভেতর গিয়েই দেখতেন, বাইরে দাড়িয়ে থেকে দেখছেন কেন?
- এটাও তো ঠিকই, কিন্তু আমি তো আর এই কলেজের ছাত্র না, আমি জব করি।
- তাহলে এখানে কি খুঁজছেন?
- কিছু না, আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে আমি আসি।
.
তারপর ওখান থেকে অফিসে চলে গেলাম। জোর বাচা বেচে গেলাম, খুব ভয় করছিল ওর সাথে কথা বলতে। কিন্তু হটাৎ করে ও আসলো কোথা থেকে, অন্য কেউ না এসে ও আসলো কেন? আর কেউ ছিলো না কলেজে? অফিসে বসে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।
.
না এভাবে আর চলবে না,,এর একটা শেষ হওয়া চাই, আর ওর পেছনে না যাওয়াই ভালো হবে। ওর মতো মেয়ে আমার কপালে নেই। ও একটা পরীর মতো আর আমি কই, আমার ওর চিন্তা করা মানায় না।
ওর মুখটা দেখার জন্য আর কলেজের সামনে না যাওয়াই ভালো হবে।
.
ওকে পাব না, আর হটাৎ করে ও সামনে এসে পড়লে আরও ভয় হয়, আত্মা ধুকপুক করে, তাই আর যাব না, বামন হয়ে চাদেঁ হাত দেওয়ার ইচ্ছা আমার নেই। আমার ভালবাসা আমি আমার মাঝেই পোষণ করে রাখি।
.
কয়েক দিন পর,,,
.
আজকে অফিস বন্ধ তাই একটু ঘুরতে বের হইছি এলাকার আশেপাশে। হেটে হেটেই যাচ্ছি, রাস্তার পাশ দিয়ে, রাস্তার দুইপাশে বড় বড় গাছ তাই ঠান্ডা ছায়া আছে সবখানে, হাটতে ভালো লাগে এমন জায়গায়। তাই হাটতে হাটতে ঘুরে বেড়াচ্ছি।
.
আমার এলাকা ছেড়ে একটু পাশের এলাকায় চলে গেলাম। কাচাঁ রাস্তায় এসে পড়ছি তাই গাড়ির ভয় নেই, পকেটে থেকে হেডফোন বের করে কানে দিলাম।
গান শুনতে শুনতে এগিয়ে যাচ্ছি সামনের দিকে, অনেক সময় পর, কে যেন পেছন থেকে হেডফোনের তার ধরে টান দিল,,
.
- এই কথা কানে যায় না।
- আপনি এখানে?
- এটা আমার এলাকা, আমি থাকবো না তো কে থাকবে?
- এ বাবা, আমি তো জানিই না এটা আপনার নিজের কেনা এলাকা।
- দেখুন ফালতু বকবক করবেন না, আপনি সেদিন কলেজে গেছিলেন কেন?
- আপনার নাম তাহমিনা?
- বলতে বাধ্য নই।
- আমাকে চিনেন?
- না,
- তাহলে আমার হেডফোন ধরে টান দিলেন কেন? জানেন না অপরিচিতদের সাথে ভদ্র ভাবে ব্যবহার করতে হয়?
- কিন্তু আপনার চোখ ট্যারা আপনাকে কখন থেকে বলছি এখান দিয়ে না আসতে তবুও আসলেন কেন? আর ওগুলো দেখতে পাননি?
- কি?
- ওইযে রাস্তার পাশে কবুতর গুলো ছিলো।
- হ্যাঁ, দেখছি তো।
- আরে ওখানে ফাদ পেতে ছিলাম ওগুলো ধরার জন্য, কিন্তু আপনি ওখান দিয়ে গিয়ে সুতো গুলো নষ্ট করে দিছেন,,
- ও স্যরি, বুঝতে পারিনি। কানে হেডফোন আর সাউন্ড বেশী ছিলো তো তাই।
- তার জন্যই তো বাধ্য হলাম ওটা টান দিতে আর আমাকে বলছেন ভদ্রতা শিখতে।
- স্যরি স্যরি, আমারই ভুল হইছে, আমার উচিত হয়নি এভাবে রাস্তা দিয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে চলার।
- হু, যান এখন এখান থেকে।
- আপনার বাসাটা কোনটা?
- ওইযে ওইটা ( হাত দিয়ে একটা দেখিয়ে দিল)
- আচ্ছা আসি।
- যান,,
.
তারপর ওখান থেকে এসে পড়লাম। আজও হটাৎ করে সামনে এসে পড়লো আর আমি জানতামও না ওর বাসা এখানে। ওর সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম ও একটু রাগি। একটু শুধু ফাদ নষ্ট করছি তাতেই অপরিচিত না মেনেই হেডফোন ধরে টান দিছে, এতে ওর রাগি ভাবটাই প্রকাশ পেল।
.
কিন্তু আজ বেশী আমার ভয় লাগছিল না, যখন পেছনে তাকিয়ে ওকে দেখলাম ওই আমার হেডফোন ধরে টান দিছে তখন একটু ভয় পেয়েছিলাম কিন্তু কিছুক্ষণ পরই আজ ভয়টা পালিয়ে গেল। আজ তো ভয় করবেই না, কারণ, আমি তো আর ওর সপ্ন দেখি না তাই ভয়টাও ছুতে পারেনি।
.
কয়েক দিন পর,,
.
- আদি বাবা এবার তো ঘরে বউ আন,
- আচ্ছা বাবা তোমরা যা ভালো বুঝো তাই করো।
- আচ্ছা পরশু রেডি হয়ে থাকিস পাশের এলাকায় আমার বন্ধুর মেয়েকে দেখতে যাব।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
.
.
আজ যাব মেয়ে দেখতে, দেখি কেমন হয়। কি জুটে আমার কপালে। দেখি আমার মতো ছেলেকে কে বিয়ে করতে রাজি হয়। চেহারাটা একটু খারাপ কিন্তু আর সবকিছু ঠিক আছে।
.
তারপর মেয়ের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হলাম। সেদিন প্রায় এখানেই আসছিলাম। তাহমিনাদের বাড়ি থেকে একটু দূরে। তাহমিনা যে বাড়িটা সেদিন দেখিয়ে ছিলো সেটা পেছনে ফেলে আসলাম। এখন একটু ভেতর দিকে যাচ্ছি। সেদিন তাহমিনার ইশারা দিয়ে দেখানো বাড়িটা শুধু দূর থেকে দেখে গিয়েছিলাম। কাছে যাইনি, কিন্তু আজ তাহমিনা কে ছেড়ে ওর পাশের বাড়িতে আসলাম মেয়ে দেখতে।
.
কিছু সময় বসে থাকার পর মেয়ে আনা হলো সামনে। ঘোমটা সরাতেই আমার বেহুঁশ হবার অবস্থা, এটা তো আর কেউ না, তাহমিনা।
সবার দেখার পর বললাম, আমি একটু ওর সাথে কথা বলতে চাই। এরপর তাহমিনার মা এসে আমাদের দুজনকে ছাদে পাঠিয়ে দিল।
.
- আপনার নামই তাহলে তাহমিনা?
- হুম।
- স্যরি,
- কেন?
- আমি বুঝতে পারিনি এটা আপনার বাসা, আর বাবা বলছিল ওনার বন্ধুর বাসায় যাবে তাই আসছিলাম, নয়তো আসতাম না।
- কেন? আমাকে পছন্দ হয়নি?
- না সেটা না, কিন্তু আপনি সেদিন ভুল ঠিকানা দিছিলেন কেন?
- হিহিহি, এমনি। এবার বলুন আপনার কি আমাকে ভালো লাগেনি।
- ঠিক তা নয়, আপনার বয়ফ্রেন্ড আছে?
- হটাৎ এ কথা কেন?
- আপনার মতো মেয়ের বয়ফ্রেন্ড থাকাটা স্বাভাবিক তাই বললাম,
- জ্বী, আমার বয়ফ্রেন্ড নেই, আমাদের ইসলামিক ধর্ম মতে প্রেম করা নিষেধ, তবুও এটা এখন কেউ মানে না কিন্তু আমি অন্যদের মতো না, আমি প্রেমে বিশ্বাসী না, আমি বিয়ের পর আমার স্বামীকেই ভালোবাসবো। বিয়ের আগে অন্য কাউকে না, কারণ, সে ভালবাসা সারাজীবন থাকার নিশ্চয়তা নেই, ভেঙে যাওয়ার সম্ভবনা বেশী।
- ঠিকই বলছেন।
- কেন আপনার কি আমাকে ভালো লাগেনি?
- আমার তোমাকে ভালো লাগবে এটা স্বাভাবিক ব্যপার। কারণ সবদিক দিয়ে তুমি অনেক ভালো কিন্তু আমাকে তোমার পাশে ভালো দেখায় না, কারণ আমি এতটা সুন্দর না, তোমার আমাকে ভালো নাও লাগতে পারে।
- উফফফ,, এই কথা,, আপনি না হয় একটু কালো তাতে কি হইছে, আমি বলছি নাকি আমার আপনাকে পছন্দ হয়নি,,!!!
- না।
- তাহলে বললেন কেন?
- কারণ আমি তো এতদিন ধরে এটাই ভেবে আসছি।
- মানে!!!
- না, কিছু না।
- তো এবার আমাকে বিয়ে করবেন তো।
- হ্যাঁ,,
- আর হ্যাঁ আমি কিন্তু আপনাকে অনেক ভালোবাসবো আপনিও কিন্তু আমাকে অনেক ভালবাসবেন।
- একটা সত্যি কথা বলবো?
- বলেন,
- আমি তোমাকে অনেক আগে থেকেই ভালবাসি। সেদিন কলেজে তোমাকে দেখতেই গেছিলাম। শুধু সেদিন না, প্রতিদিনই তোমাকে দেখতে গেটের সামনে গিয়ে দাঁড়াতাম।
- কোনো দিন বলেন নাই কেন?
- ভয় করতো খুব।
- কিসের ভয়?
- আমাকে তো তোমার সাথে বেশী ভালো দেখায় না তাই তুমি যদি কিছু মাইন্ড করো তার জন্য।
- আপনি একটা গাধা,
- কেন?
- যাকে ভালবাসেন তাকে ভালবাসার কথা বলতে সমস্যা কই, হোক সে আপনার সাথে মানায় না তবুও তাকে বলা দরকার, আপনার মনের ফিলিংস তো জানাবেন। তারপর যা হবার হবে। ভালবাসা চেহারা দেখে হয় না, ভালবাসা মন থেকে হয়।
আর আমিও তো এখন আপনাকে অনেক ভালবাসবো। আমি তো আর আপনার চেহারা দেখে আপনাকে ভালবাসছি না, আমি আপনার ওই সুন্দর মনটাকে ভালবাসছি, বুঝতে পারছেন?
- বুঝলাম,,
- আপনার নাম যেন কি?
- আদি,
- বাহ্ খুব সুন্দর নাম, এবার আমাকে বিয়ে করবেন তো?
- না করার কি আছে, আমি তো আগেই ভালবাসি।
- হুম, নিচে চলুন
- আচ্ছা।
.
তারপর বাড়ি এসে পড়লাম।
.
কয়েক দিন পর,,
বিয়ে করে নতুন বউ বাড়িতে আনলাম বাবার কথা মতো। তবে যাকে ভালবাসি তাকেই এনেছি বউ করে।
ঘরে যাওয়া মাত্রই খাট থেকে এসে সালাম করলো,, তারপর আবার জায়গা মতো বসে পড়লো। রাত ১১ টা বাজে তখন
.
- কি হলো ওখানে দাড়িয়ে আছেন কেন?
- না মানে এমনি,
- এখানে এসে বসুন।
- এইতো আসছি, তোমার জন্য একটা জিনিস আনছি,
- কি?
- এই আংটি তোমার, এটা আমার পছন্দ অনুযায়ী তৈরি করছি।
- পড়িয়ে দেন,
- নাও দিলাম,
- চলুন না একটা ছাদে যাই।
- এখন ছাদে?
- চলুন না প্লিজ প্লিজ,
- আচ্ছা চল,
আমার অপ্রকাশিত ভালবাসা আজ প্রকাশ পেল।
.
রাত ১১:১৫
ছাদে বসে আছি, আর তাহমিনা আমার পাশে বসে আছে, দুজনে চাদঁ দেখছি """" আর ভাবছি যা হলো এটা কি সপ্ন না বাস্তব.! আমি তাহলে এতদিন ভুল ভাবতাম, সুন্দর সবাই হতে পারে কিন্তু অহংকারী সবাই হয় না।
আমাদের দেশে অনেক মেয়েই আছে যারা নিজের সুন্দর রুপ নিয়ে অহংকার দেখায়। নিজে সুন্দর বলে অন্যদের সাথে মিশে না ক্লোজ ভাবে। তারা তাদের রুপকে এঞ্জেলের সাথে তুলনা করে। প্রমাণ হলো, ফেসবুক। ওখানেই তারা তাদের রুপ নিয়ে যথেষ্ট অহংকার দেখায়।
.
কিন্তু এমন মেয়ে খুব কমই আছে যারা নিজের চেহারা নিয়ে অহংকার করে না। যেমন গল্পের তাহমিনা। ভাবছিলাম ও অন্যদের মতো অহংকার দেখাবে ওর রুপ নিয়ে, তাই কোনো দিন ওকে নিজের ভালবাসার কথা বলিনি। কিন্তু আমার ভুল ধারণাটা ভেঙে গেল যখন ওর সাথে ফ্রী হয়ে কথা বলতাম।
.
ও ওর চেহারা নিয়ে ততটা ভাবে না বা অহংকার নেই, ও শুধু ধর্ম অনুসরণ করে নিজের স্বামীকে ভালবাসবে কোনো সুন্দর হিরো কে নয়। ভালবাসতে গেলে চেহারা নয় মন লাগে।
যেটা সবার থাকে না, এখন থাকে শুধু টাকা আর চেহারার অহংকার।
.
ভালবাসলে মন থেকেই ভালবাসতে হবে, কোনো কিছুর বিনিময়ে না। যেমন, তাহমিনা এখন আমাকে ভালবাসে আমার সুন্দর চেহারা ছাড়াই। তেমনই অহংকার ছাড়া ভালবাসতে হবে।
এটাই ছিলো আমার অপ্রকাশিত ভালবাসা।
লিখাঃ Asadur Rahman Hadi.