.
- এ আদি, যা টেহা উডাই ফেলা।
- কাকা তোমারে কত বার কমু আমার নাম হাদী, আদি না।
- ধুর বেডা যা তো নাউ ভিড়াইমু টেহা
উডা।
- হ যাইতাছি.....
.
এপার আর ওপারের সেতু বন্ধন কারী দুটো
নৌকার একটাতে কাজ করে হাদী।
আজকে লোক অনেক কম। তাই টাকাও কম।
যা হইছে তা থেকে তিন ভাগের এক ভাগ হাদীর। কিন্তু সেটা থেকে আবার অর্ধেক দিতে হয় চেয়ারম্যান এর চামচা গুলারে।
না হইলে কাজ করতে দেয় না জানোয়ার গুলা।
আজ মাত্র চল্লিশ টাকা নিয়ে ঘরে ফিরছে হাদী। ভাত রান্না করে পিচ্চি বোনকে খাওয়াতে হবে।
যদি একটা নৌকা নিজের থাকত তাহলে রোজকারটা বাড়ানো যেত।
.
- কাকা তোমার নৌকাডা আমার কাছে
বিক্রি করবা?
প্রহরের পাতানো কাকা শব্দ করে হেসে
উঠল।
- কেন রে? তুই পিচ্চি মানুষ নৌকা কিনা কি করবি?
- কাকা ম্যালা টাহা কামামু।
- টাহা দিয়া কি করবি?
- শহরে বড় বাড়ি আর বড় গাড়ি কিনমু।
এবারও কাকা উচ্চস্বরে হেসে বলল...
- এই চিন্তা হইল কবে থেইকা বেডা?
- অনেকদিন থেইকা কাকা। আমাগো গেরামের সব পিচ্চি গুলারে আমার বাড়িতে নিয়া যামু। ওগরে আর কাজ করতে দিমু না।
- একদিন তুই অনেক বড় হবি রে বেডা....
- কবে কাকা?
- ধুর বেডা ওহন কাম কর...
.
অনেক স্বপ্ন ছোট্ট হাদীর। কতই বা বয়স! নয়-দশ।
একদিন হাদীর সেই পাতানো কাকা চলে গেল। যাবার আগে নৌকা টা হাদী কে দিয়ে গেছে।
সেই থেকে শুরু, নিজেই বৈঠা হাতে নিয়েছে।বৈঠা হাতেই বেড়ে ওঠা। পিচ্চি বোনকে বিয়ে
দিয়েছে।সারাদিন রোদে পোড়া তামাটে গায়ের রং। মাথায় গামছা বেধে ঝড় বাদল কোন পরয়া নেই।
এপার ওপারের দুই পাশের মানুষের কাছেই
প্রিয় সে।সহজ সরল একটা মানুষ। চাদা নিয়ে একবার তার সাথে ঝগড়া হয় চেয়ারম্যানের চামচাদের সাথে।
তারপর থেকে বন্ধ হয়ে যায় তার নৌকা
চালানো। তাই বলে সে বসে থাকেনি।
নৌকা নিয়ে চলে যায় বহু দূরে। জংগল থেকে কাঠ কেটে নিয়ে বাজারে বিক্রি করে।
এভাবেই একার সংসার চলে তার।
একদিন নৌকা নিয়ে বের হওয়ার প্রস্তুতি
নিচ্ছিল সে। হঠাৎ শুরু হল বৃষ্টি। কাজ থেমে গেলে বস্তির ভেতর যে ঘরটায় থাকে সেটা ছাড়তে হবে।
ভাড়া দেয়া হয়না তিন মাস। তাই বৃষ্টির ভেতর
বেরিয়ে পড়ল সে। নৌকা ছেড়ে দিয়ে চলতে শুরু করল। নদীর পানি কেমন খেপে গেছে।এসবের সাথে হাদী খুব ঘনিষ্ঠ ভাবে পরিচিত। পাড় ঘেষে চলতে হচ্ছে।
ভয় একদম করছে না তা নয়। হঠাৎ কেউ ডাকতে শুরু করল...
মাঝি...... ও মাঝি........
ও... ও... ওওও মাঝি......
পাড়ে ভিড়ানোর সাথে সাথে একটা মেয়ে লাফিয়ে নৌকার ভিতর উঠল।
- এই আপনারে চিনলাম না। কি চাই?
- মাঝি আমাকে একটু ওই পার দিয়ে
আসবা?
- আমি সোজা যামু ম্যাডাম,আপনে নামেন...
- ও মাঝি আমি খুব বিপদে পড়ছি।একটু নিয়ে চলনা।
- আমি যাইতেছি জংগলে আপনেরে কই নিমু?
- তোমার সাথে নিয়ে চল না মাঝি। আমি খুব বড় বিপদে আছি।
মেয়েটার এমন করুণ স্বর মাঝিকে আর শক্ত হতে দিল না। সে তাকে সাথে নিয়ে নৌকা ছেড়ে দিল।
(Asadur Rahman Hadi)
.ঢেউয়ের সাথে সাথে শহুরে মেয়েটা চোখ বড় করে হাদীর দিকে চেয়ে পড়ছে।যেন বলতে চাইছে কিছু হবে না তো! ছেলেটা যেন মেয়েটার মনের কথা বুঝতে পারল।
- ম্যাডাম ডরায়েন না। কিছু হইব না।
ওর কথায় মেয়েটা কিছুটা আশ্বস্ত হয়ে বসলো।
- মাঝি এই ঝড়ে কোথায় যাচ্ছ?
- জংগলে যামু। মধু বা কাঠ কাইটা বাজারে বিক্রি করি আমি। তা আপনি এই ঝড়ে কই যান?
- আসলে আমি ঢাকা থাকি। বাড়ি থেকে
বিয়ে ঠিক করছে, কিন্তু ছেলে আমার একদম পছন্দ না। তাই পালিয়ে আসছি। আর এমন জাইগায় এসে পড়ছি, যেখানে কোন
আধুনিকতার ছায়া পড়েনি এখনো!
যাওয়ার কোন জাইগা নেই আপাতত তাই
তোমার নৌকায় উঠে পড়লাম।
- আপনের নাম কি ম্যাডাম?
- আমার নাম তাহমিনা....
- আইচ্ছা...
- আচ্ছা তোমার বাড়ি কই মাঝি?
- আমার বাড়ি নাই এক বস্তিতে ছোট এক খান ঘরে ভাড়ায় থাকি.....
- আর কে কে আছে তোমার?
- আমার কেউ নাই। একটা বইন আছিলো,বিয়া দিয়া দিছি।
- তোমার বাবা মা?
- জানি না...
- মানে?
- তাগোরে দেহি নাই কখনো! আমাগো
এলাকার বাইরে যে বড গাছ খান দেখছেন না? ওইখানে এক পাগলা বাবা আছিল।
হের কাছেই বড় হইছি।নপিচ্চি বইন টা পাইছিলাম তার থেইকা।অনেক বছর আগে সে মইরা গেছে। তারপর থেইকা বইনরে নিয়া থাকি।
মায়ের কথা মনে পড়ত অনেক। বাবার
কাছে কইতাম মায়ের কাছে যামু। সে কইত আমার নাকি বাবা মা কেউ নাই।
আমারে কোত্থেইকা নাকি কুড়াই আনছে।
এর পর আর কোনদিন জিগাই নাই। হে মরবার পর থেইকা নৌকায় কাম শুরু করি।
.
মাঝির কথা শোনার পর মেয়েটার মুখে কথা ফুটল না আর। আড়ালে একবার চোখ মুছে নিল। কেমন সহজে কথা গুলা বলল অথচ একটু পানি পড়ল না ছেলেটার।
আসলে কেউ অনেক বেশি কষ্ট যখন সহ্য
করে ফেলে। তার চোখে পানি আসতে
চায় না।
- তোমার নামটাই জানা হল না মাঝি!
- আমার নাম হাদী।
- বাহ নামটা বেশ সুন্দর। কে রেখেছিল?
- ওই পাগলা বাবা এই নামে ডাকত। তখন
থেইকা সবাই এই নামে ডাকে।
- তুমি স্বপ্ন দেখ মাঝি? ধুর আবার মাঝি বললাম!
- মাঝিরে মাঝি কইবেন না কি কইবেন?
- তোমারও তো একটা নাম আছে তাই না?
- আগে ভাবতাম শরে একটা বড় বাড়ি বড়
গাড়ি কিনমু।এখন ওইসব ভাবি না।
- কেন?
- বইনের বিয়া দিছি এক ডাকাইতের লগে।
যৌতুক না লইয়া বিয়ে সে করবে না।
তারে পঞ্চাশ হাজার টেহা দিলাম,
বইনের বিয়াতে আরও বিশ হাজার খরচ
কইরা আমার কাছে অহন যা আছে তাতে
বাজার কইরা খাওন কষ্টের।
মাঝির মুখের দিকে তাকিয়ে রইল তাহমিনা।
এত সরল মানুষ আজও আছে। কত স্বপ্ন এদের অপুরনীয় থেকে যায়। ব্যাপারটা তাহমিনার মন মেঘের মত কালো করে দিলো।
- আইচ্ছা আপনি আমার লগে যাইতাছেন।
থাকবেন কই?
- তুমি যেখানে থাকবা!
- আপনি আমার লগে থাকতে পারবেন না।
আমার ফিরতে দুইদিন তিনদিন লাইগা
যাইব।
- তাহলে তো দারুন হবে।জংগলে ট্যুর হয়ে
যাবে।
- কি হবে???
- ভ্রমন.......
হাদী ভাবলো মেয়েটার মাথায় সমস্যা আছে।এদিকে বেলা প্রায় শেষ।
খুদা লেগেছে এরই ভেতর কয়েক বার বলেছে তাহমিনা। জংগলে ঢোকার আগে শেষ বাজার থেকে কিছু শুকনা খাবার কিনে আনল হাদী। রাতের মত খেয়ে নিল ওরা।
সামনে কোথাও নৌকা বেধে রাতের মত
থামতে হবে। ইতিমধ্যে জংগল শুরু হয়ে
গেছে। একটা গাছের গুড়িতে নৌকা বেধে ফেলল হাদী। মেয়েটার ভেতর হঠাৎ কেমন অস্থিরতা দেখতে পেলো হাদী।
তাহমিনা ভাবতে লাগল অচেনা অজানা একটা ছেলের সাথে এত দূর এসে না জানি কোন বিপদ ডেকে আনলাম।
একে তো আশপাশে দশ মাইলের ভেতর কোন মানুষ নেই। তার উপর একটা নৌকাতে দুইজন.....
তাও একজন ছেলে....
মাদুরের উপর এপাশ ওপাশ করতে লাগল তাহমিনা। যেন ওর মনের কথা বুঝতে পেরেই হাদী বলল...
- ম্যাডাম ডরায়েন না। ঘুমাই পড়েন। কিচ্ছু
হইব না।
কিছুটা আশ্বস্ত হল তাহমিনা। ধীরে ধীরে ঘুমের অতল গভীরে হারিয়ে গেল।
.
.সকালে ঘুম থেকে উঠে হাদীকে পেলো না
নৌকায়। ডাকতে শুরু করল। কিন্তু কোন
সাড়া পেল না। একা একা ভয় কাজ করছে।
হঠাৎ মাটি ফুড়ে কে একজন উদয় হল।
গামছা দিয়ে তার মুখ বাধা। দেখেই আরও জোরে চিৎকার শুরু করল মেয়েটা।
- আরে ম্যাডাম আমি.....
- তুমি??? মুখ বেধে ডাকাত সেজেছ কেন?
- মধু কাটতে মুখ ঢাকা লাগে।
- আমি তো ভয় পেয়েছিলাম। মাঝি আমি
ওয়াশরুমে যাব!
- কই যাইবেন? ( ভ্রু কুচকে জিগেস করলো হাদী।)
- টয়লেট চিনো টয়লেট?
- হা হা হা হা হা হা.......
- হাসার কি হলো?
- ম্যাডাম এই হানে টয়লেট কই পাইবেন।
- তার মানে??? তোমরা কি কর?
- জংগল আর নদীর পানি।
- মানে আমি জংগলে যাব???
- এ ছাড়া আর উপায় নেই।
- আমি পারবো না....
- ম্যাডাম বাঘ ভালুক নাই এইহানে।
মনে মনে নিজেকে গাল দিচ্ছে তাহমিনা। কেন
যে আসতে গেল। মাঝির কথা মত কাজটা সারতে হল বাধ্য হয়ে।
জীবনের সবচাইতে বাজে অভিজ্ঞতা হল আজ।
.
মাছ ধরার চেষ্টা করছিল হাদী। হঠাৎ শহুরে মেয়েটা চেঁচাতে শুরু করায় দৌড়ে তার কাছে গেল সে। স্যাঁতসেঁতে মাটির উপর পড়ে গিয়েছে মেয়েটা। পায়ে হাত দিয়ে বসে আছে।মচকে গেছে পা টা।
পানি দিয়ে কিছুক্ষন টানাটানি করল হাদী।
কাজ হচ্ছে না। ব্যাথায় মেয়েটার মুখ নিল হয়ে গেছে।
- ও ম্যাডাম উঠতে পারবেন একা একা?
কোন কথা না বলে চেষ্টা করল। একটু উঠেই
আবার চিৎকার করে বসে পড়ল সে।
- আমি পারব না....
বাধ্য হয়ে মেয়েটাকে কোলে নিয়ে
নৌকার পাশে বসিয়ে দিল।
- ম্যাডাম পানির ভেতর পা চুবান। ভালো লাগব....
কাঠ কেটে নৌকা ভরতে লাগল হাদী। আর তাহমিনার সেটা দেখা ছাড়া কিছুই করার নেই। ভাবছে ছেলেটাকে বিশ্বাস করাই
যায়। কিছু হলে এতক্ষন হয়ে যেত।
- হাদী...
- কয়া ফালান ম্যাডাম...
- তোমার নাম ধরে ডাকছি কিছু মনে করছো না তো?
- কি যে কন ম্যাডাম কি মনে করব!
- তুমিও আমাকে আমার নাম ধরে ডাক...আর আপনি বলতে হবে না তুমি করে
বলবা। আমি তোমার থেকে বড় না।
- ম্যাডাম হাসাইলেন। আপনারা শিক্ষিত মানুষ। তাই তো সম্মান দিয়ে কথা কই।
- তোমাকে যা বলেছি তাই বলবা।
- আইচ্ছা...
- হাদী আমাকে জংগল ঘুরিয়ে দেখাবা?
- দেহনের কিছু নাইই ম্যাডাম.....
- আবার ম্যাডাম?
- ভুল হইছে। আর কমু না...
- নিয়ে যাবা?
- পায়ে না ব্যাথা পাইলা। কেমনে যাবা?
- তুমি হেল্প করলে পারব।
- আইচ্ছা চলেন...
হাদীর কাধে হাত দিয়ে আস্তে আস্তে এগিয়ে চলল তাহমিনা। নানা ধরনের গাছ।
পাখির কিচির মিচির।
- আচ্ছা হাদী দ এখানে হিংস্র জানোয়ার নেই তো আবার?
- না। তয় বানর,সাপ,কচ্ছপ,বন বিড়াল,বন মোরগ,আর সিংহ আছে।
- কি?? সিংহ???
- হা হা হা... এত ডরাও কেন? সিংহ কোত্তে আইব?
- মিথ্যা বললে কেন?
- মজা করলাম তোমার লগে।
ঠিক তখনি একটা বানর ঝুপ করে তাহমিনার সামনে পড়ল। ভয়ে ওর অন্তর আত্বা বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো।
চিৎকার দিয়ে হাদী কে জড়িয়ে ধরল ও।
- তাহমিনা এইডা বানর,কিছু কইব না।আমরা ওদের এলাকায় চইলা আইছি। চলো ফিরা যাই...
- হু চলো....
- আজই বাড়ির দিকে রওনা করমু।
- কেন?
- কাম শেষ এদিকের।
তাহমিনার মন বিষন্নতায় ছেয়ে গেল। ফিরে যাওয়া মানেই আলাদা হয়ে যাওয়া।
যেটা তাহমিনা কোন ভাবেই চায় না।
আর কিছু সময় থাকতে চাঢ অচেনা এই ছেলেটার সাথে। এই অল্প সময়ে কেমন কাছের মানুষ ভাবতে শুরু করেছে।
ভরসা করা যায় ছেলেটার উপর। যার নেই কোন পিছু টান।
- কি ভাবতাছ?
- হু....?
- কইলাম যে চুপচাপ কি ভাব?
- তোমাকে একটা কথা বলব হাদী?
- আইচ্ছা আমি কি তোমারে কিছু কইতে না করছি?
যা কইবা কও।
- আমি তোমার সাথে থাকলে কি তোমার সমস্যা হবে ?
- আচ্ছা মাইয়া তুমি! আমি কি একবারও কইছি সেইডা?
- আমি সব সময় তোমার সাথে থাকতে
চাই।
- হাহাহাহাহা...
- হাসছ কেন?
- আমার লগে কই থাকবা?
- তুমি যেখানে থাক!
- আমি একটা ছেলে মানুষ। আর তুমি মাইয়া মানুষ এক লগে কেমনে থাকবা?
- ( আল্লারে আল্লা এইটা কোন লেভেলের গাধা?)
- বিড়বিড় কইরা কি কও?
- ছেলে মেয়ে এক সাথে থাকতে দেখনি কোন দিন?
- হ দেখছি। তয় ওরা তো বিয়া কইরা স্বামী স্ত্রী হইছে।
- দরকার হলে আমরাও হবো।
- আমার বউ হইবা? তুমি?
- হ্যা। কেন আমাকে পছন্দ হয়না তোমার?
- পছন্দ কেন হইব না। তয় আমার লগে তুমি
থাকতে পারবা না।
- কেন পারবো না? তুমি কি বিবাহিত?
- না। ওইডা করা হয় নাই।
- তাহলে কাউকে পছন্দ কর?
- তাও না।
- তাহলে সমস্যা কি?
- আমার থাকনের জাইগা তোমার পছন্দ
হইব না। আর মাটিতে ঘুমাইতে হয় আমার।
- আমি পারব।
- ম্যাডাম তুমি এখনো অনেক ছোট। ভাল-মন্দ বোঝ না।
- ওই আমার অনার্স করতে আর দু বছর
লাগবে। ভাল মন্দ যথেষ্ট বুঝি। এটা ঠিক একটু কষ্ট হবে। তবে চালিয়ে নেব।
হা করে তাকিয়ে আছে হাদী,
- ওইভাবে কি দেখ?
- না না কিছু না...
- আমাকে নৌকায় উঠিয়ে দাও।
তাহমিনাকে নৌকায় উঠিয়ে দেয়ার পর রান্না
শুরু করে দিলো।
শুধু মাছের ঝোল আর ভাত।
খাওয়ার সময় বাধল বিপত্তি। তাহমিনাকে ভাত দেয়া হলে খুব আগ্রহের সাথে খেতে শুরু
করল।
- কি ব্যাপার তুমি খাচ্ছ না কেন।
- তুমি খাও আমি পরে খাব।
- কেন?
- এমনি...
তাহমিনা হঠাৎ খেয়াল করল প্রহরের বৃদ্ধাঙুলে কাপড় দিয়ে মোড়া।
- এই তোমার হাতে কি হইছে?
- কিছুনা। ব্যাথা পাইছি একটু।
- বুঝেছি। এদিকে আসো.....
এভাবে কখনো কল্পনাও করা হয়নি। কোন
এক অচেনা মেয়ের হাতে ভাত খাবে হাদী।কাঠের একটা টুকরা হাতের ভেতর
ঢুকে না পড়লে এটা হত না।
- একটু সাবধানে কাজ করবা না?
কথাটা মধুর মত শোনাল হাদীর কানে।
- কি হল কথা বলছ না কেন?
হাদীর চোখ মোছা তাহমিনার দৃষ্টি এড়ালো না।
- আজওওওব কাঁদছো কেন?
- কেউ কোনদিন কয়নাই এমন কইরা....
- ধুর এমন ভাবছ কেন। এখন থেকে আরও
সাবধানে কাজ করবা।
- তুমি শহরে চইলা যাইবা না আবার?
- তুমি থাকার পারমিশন দিলে যাবো না।
- কি দিমু????
- অনুমতি.........
- গ্যারামের লোকে কয় শহরের মাইনসের প্রেম,ভালবাসা,মায়া মহব্বত নাই।
- ওরা ভুল বলে।
- অহন তো তাই মনে হচ্ছে।
- এখন খাওয়াটা শেষ করেন....
.
সূর্য ডুবি ডুবি করছে। তাহমিনার কথায় আরও একটা দিন এখানে থাকতে হচ্ছে। নৌকার পাশে পাশাপাশি বসে আছে দুজন।
হাদীর কাধে মাথা রেখে সূর্যাস্ত দেখছে তাহমিনা।
দুজোড়া পা পানিতে আলোড়ন করে চলেছে।হাত যেন খুজে পেয়েছে তার সঙ্গী। আজ রাত টা এভাবেই কাটবে ওদের। আজকের রাতটা
ভালবাসার সাক্ষী। সারারাত আজ চাঁদের সাথে গল্প করবে দুজন।
অন্ধকারের বুক চিরে কেউ বলে উঠল ভালবাসি তাহমিনা....
আচমকা কেপে উঠল মেয়েটা। হাদীর
হাতটা আগের থেকে বেশি শক্ত করে
জড়িয়ে ধরল।বলল....
★
★
★
ভালোবাসি।
.
লেখাঃ Asadur Rahman Hadi.