সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

☆অভিমান☆


- দাঁড়া...
- কেন?
- দাড়াতে বলছি দাড়া...
- মাত্র বসলাম,এখন.....
- আদি দাড়াতে বলছি তোকে..... ( একটু ঝাড়ি দিয়ে )
- হুম.... দাড়ালাম! বল.....
- এবার দু পা সরে যা....
- ওকে! গেলাম।
- এবার বস!
- মানে কি? এত দুরে বসে কথা বলব?
- হ্যাঁ, ওখান থেকে কথা বলবি...
- আমি তোর বয়ফ্রেন্ড না শত্রু রে,?
- সুযোগ পেলে বয়ফ্রেন্ড শত্রু হয়ে যায়......
- তুই এমন কেন রে?
- খুব খারাপ?
- খারাপ বলছি আমি?
- তাহলে?
- আমরা একটা রিলেশনে আছি। একজন আর একজন কে ভালবাসি। তবে পাশে বসতে কি প্রবলেম আমি বুঝি না!
- আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি..... আজকে পাশে বসতে দিলে কাল হাত ধরবি,পরশু রিক্সায় ঘুরতে চাইবি,তারপর একটা চুমু তারপর ব্লা.....ব্লা...... ব্লা.........
- বুঝলাম..... তবে তুমি করে বলতে কি সমস্যা?
- আরে বোকা তুমি থেকেই তো শুরু সব কিছু.....
- ফালতু লজিক....
- ওই কি বললি তুই?
- নাহ.... কিছু বলিনি তো....!!
- মিথ্যা বললি না?? বাই.........
- সে কি? তাহমিনা.......... এই তাহমিনা শোন........
;
ধুর রিলেশন না কাচা খেজুর! কোন রস নেই, কষে ভরা.....
মেয়েটাকে বুঝিই না। কি যে সব লজিক দেখায়। অদ্ভুত সব। তবে ক্লাসের সব সময়ের ফাস্ট গার্ল ও।
- ভাই বাদাম খাইবেন?
- (...........) কথাটা শুনতে পায়নি আদি!
- ও ভাই বাদাম দিমু?
- হুম? কি?
- বাদাম দিমু বাদাম?
- না যা এখান থেকে!
- পাচ টেহার নেন ভাই...
- শালা বাদাম তোর পু...........(কথা শেষ হলনা আদির)
ডান কানে তীব্র টান অনুভব করে আ,উউউ,,,,,,, করতে লাগল....
- সরি বল ওকে.....
- সে কি তুই যাস নি?
- আগে সরি বল ছেলেটাকে।
- কানটায় ছাড় ব্যাথা পাচ্ছি।
- আদর করার জন্য কেউ কান ধরে না। সরি বল....
- ভায়া ভুল হয়ে গেছে। সরি ভায়া......
- দিন দিন তুই এমন অসভ্য হইতেছিস কেন?
- মেজাজ খারাপ এমনিতে তার উপর কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান.....
- ওর তো এভাবেই বেচে থাকতে হয় তাই না?
- আসলে আমি কত দুর থেকে আসছি তোর সাথে দেখা করতে আর তুই চলে....
- হ্যা বুঝেছি.....তাই জন্য ফিরে আসছি......
- চল হাটি...
- চল......
;
বাসায় ফিরতে আমার রাত হয়ে গেল।অনেকটা দুর থেকে আমাকে কলেজ যাতায়াত করতে হয়। তাহমিনার সাথে পরিচয় অনেক দিনের। রিলেশন শুরু করছি সেটাও প্রায় চার পাচ মাস হয়ে গেল। কিন্তু এখন পর্যন্ত তুই থেকে তুমি বলা হয়নি। ওর সব কিছুতে অন্যরকম একটা ব্যাপার আছে।তাই বলে কেউ কারো দূরে নই। মাঝে-মধ্যে খুব রাগ হয় ওর উপর কিন্তু বেশিক্ষণ রেগে থাকতে পারি না।
এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
;
- এই আস্তে চালাও.....এক্সিডেন্ট করবা তো!
- আরে আমি আছি না। শক্ত করে ধরো আমাকে।
আগের থেকে বেশি শক্ত করে জড়িয়ে ধরল তাহমিনা আমাকে...... বাইকের গতি আরও বাড়িয়ে দিলাম আমি........
হঠাৎ....... ঘুম ভেঙে গেল বোনের কান টানা খেয়ে......
- কি হইছে? সকাল সকাল মরছিস নাকি?
- আম্মু বাজারে যাইতে বলছে। এই লিস্ট নে......
- দুর হওও.......
আহ..... এই দুঃখ কই রাখি। স্বপ্নের ভেতর তাহমিনার স্পর্শ পাইছিলাম একটু সেটাও সহ্য হলোনা......
মুখটা কোন রকম ধুয়ে বের হলাম। গেটের সামনে বাবার সেই আমলের চায়না পনিক্স সাইকেল টা ফেলে রাখা। ব্রেক আর দুটো চাকা ছাড়া কিছু নাই তাতে।স্বপ্নে দেখা বাইকটা ছিল.........
ভেবে আর কি হবে। প্যাডেল ঘুরিয়ে বাজারে আসলাম.....
পকেট হাতড়ে বাজারের লিস্ট পেলাম না। মেজাজটাই বিগড়ে গেল। আবার বাসায় এলাম। বিছানার উপর পড়ে আছে সেটা।সেদিনের দিনটা সব মিলিয়ে খারাপ গেল আদির। মোবাইলের পুরোন মেসেজ গুলা পড়েছে। আর মুখ টিপে একা একা হাসছে।পুরন মেসেজ গুলা সব সময় বোকা বোকা হয় মনে হয়। ঠিক তখনি তাহমিনা ফোন দিল....
- হাই জানু.....( আদি।)
- তোমাকে না বলছি এই সব বলবা না আমাকে?
- ফোনে ঠিকি তুমি বলা যায় সামিনে বললে দুনিয়া যেন উল্টে যাবে।
- এত কথা বল কেন?
- ওকে..... চুপ!
- কি করছিলে?
- শুয়ে আছি...
- এই অসময়ে?
- কাজ নেই তাই......
- শোন কাল দেখা করবা বিকেলে।
- কোথায়?
- যেখানে সব সময় করি।
- আচ্ছা.....
;
এই প্রথম তাহমিনা লেট করছে। এমনিতে ও সব সময় আদির আগে আসে। আজ কি হল কে জানে।
- হাই......
হঠাৎ কথা টা শুনে কিছুটা চমকে গেল আদি।পেছন ফিরে দেখে তাহমিনা দাড়িয়ে আছে।কিছুটা হাপাচ্ছে....
- আসতে পেরেছেন তাহলে?
- আর বলিস না.... রাস্তায় দেখা হলো ফাহিমের সাথে। আর খুচরা পেচাঁল শুরু করে দিলো।
- এখনও কথা বলিস ওর সাথে?
- আরে বাবা নাহ..... ও সিনক্রিয়েট করতে শুরু করল। তাই বাধ্য হয়ে কথা বলতে হল...
- তাই বলে আধা ঘন্টা কি কথা বলতে হবে?
- বললাম না..... বাধ্য হয়ে......
- তা বাধ্য হয়ে ওখানেই থেকে আসতি.....
- আদি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে...
- হ্যাঁ, আমার সব কিছুই তোর কাছে বাড়াবাড়ি লাগে।
- কি বলতে চাইছিস?
- কিছু না....
- আমি কিন্তু চলে যাব!
- কে ধরে রেখেছে?
কথাটা শুনেই তাহমিনা উঠে গেল। অন্যদিন তাহমিনা রাগ করে চলে যেতে চাইলে আদি গিয়ে থামাত। কিন্তু আজ যে যার ইগো নিয়ে ব্যাস্ত। যাকে নিয়ে ঝগড়া হল সে ফাহিম। তাহমিনার সামনেই প্রপোজ করেছিল সাদিয়াকে। ওদেরই একটা ফ্রেন্ড। সেই থেকে ফাহিমকে তাহমিনা দেখতে পারে না। এমনকি ওর কথা শুনতেও পারেনা। হঠাৎ খেয়াল হলো তাহমিনার ব্যাগটা ফেলে রেখে গেছে....
প্রায় এই ভুলটা করে ও। আদি গিয়ে এগিয়ে দেয়। আজ আর হলো না........
সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানেই অপেক্ষা করল আদি।নাহ্, ব্যাগ নেয়ার জন্য ফিরে আসেনি তাহমিনা। শেষে নিজের সাথে করে বাসায় নিয়ে এল প্রহর ।এক দু দিন করে এক সপ্তাহ কেটে গেল। কেউ কাউকে একটা ফোনও করেনি। শেষে আদি দিলো কল......
রিং বাজতেই কেটে দিলো কল.....
সাথে সাথে একটা মেসেজ " কোন দরকার নেই কল করার "
আবার কল করল প্রহর.....
ফিরতি আবার মেসেজ এলো "এক সপ্তাহ যখন পেরেছ ভুলে থাকতে এক যুগও পারবা,। ফোন দিও না। বাই........."
এরপর আদি একটা মেসেজ দিলো....
- সরি..
- বাই......
এরপর ফোন অফ.....
মেজাজ এবার আরও খারাপ হলো। আমিও আর ফোন দিবো না। দেখি কতক্ষণ পারে ও।
এভাবেই কেটে গেল আরও এক সপ্তাহ.....
তারপর একমাস......
পেরে ওঠেনি তাহমিনা। সে প্রহরকে অনেকবার কল করেছে আজ। কিন্তু বারবার যান্ত্রিক কন্ঠটা বলে দিচ্ছে।সুইচ অফ........ফেসবুক আইডিটা ডিএক্টিভেট।
রাগ হয়ে নিজেরটাও ডিএক্টিভেট করে দিল সে। এখন সময় টা মাসের গন্ডি পার হয়ে বছরে গিয়েছে। যোগাযোগ আর হয়ে ওঠেনি কারও।
ওয়্যারড্রব খুলতেই তাহমিনার রেখে যাওয়া ব্যাগটা বের হল। অনেক কথাই মনে পড়ে গেল আবার। এক বছরে যতটা না ভুলতে পেরেছি তাহমিনাকে তার থেকে বেশি মিস করেছি। ব্যাগের ভেতর অনেক কিছুই আছে......
মেকাপ বক্স,আয়না,চিরুনি, একটা ডায়েরি আর কিছু টাকা......
ডায়েরিটা বের করল আদি....
প্রথম পেজেই ধাক্কা খেলো...
- তুই একটা কুত্তা.....
আজব! এসব লেখে কেউ ডায়েরিতে! দ্বিতীয় পেজে আবার...
- লজ্জা করে না চুরি করে ডায়েরি পড়তে?
এবার বুঝলাম কেন এসব লেখা......
আরও কয়েক পেজ উল্টানোর পরে লেখা
পেলাম......
" তোমাকে নিয়ে লেখা "....
... অনেক মেয়েদের দেখি ডায়েরিতে
কি যেন হাবিজাবি লিখে। ও সব দেখে
আদিখ্যেতা মনে হয়েছে সব সময়। শুধু
মেয়ে না ছেলেরাও শুনেছি ডায়েরি
লিখে। কি যে লিখে মাথায় আসে না।
আমি ওসবের একদম ধার ধারি না। কিন্তু
হঠাৎ যে কি হলো নিজেই বুঝলাম না.....
তোমার সাথে কাটানো প্রতিটা সময় এত
এত ভাল লাগে যে মনে হয় সময় টা ধরে
রাখি। কিন্তু সেটাও সম্ভব না।
তাই নিজেও এই ডায়েরি নিয়ে বসছি........
জানো, আদি তোমাকে তুই করে বলতে কষ্ট
হয় খুব। কিন্তু কেন বলি জানো?????
তুমি বলায় যে মধুরতা আছে সেটা আমি
তোমাকে একবারে বিয়ের পর দিতে চাই।
যেটা তখন তোমাকে এত সুখ দিবে
নিজেও কল্পনা করতে পারিনা। তা বলে
ভেব না আমি তোমাকে বিশ্বাস করি
না। নিজের থেকে বেশি বিশ্বাস করি
তোমাকে.....
একটা জিনিস খুব ভয় পাই জানো???
রিলেশন যত গভীর হয়, চাহিদা যেন একে
অপরের প্রতি খুব বেড়ে যায়। একটা সময়
শারীরিক সম্পর্ক হয়ে যায়। আর তখনি
আগ্রহ হারিয়ে যায় ছেলেদের। এটা নিজের চোখে দেখেছি। আমার সব চেয়ে
কাছের বন্ধু প্রমির সাথে ঘটে গেছে।
আমি জানি তুমি সেরকম নও।তারপরও
চীরন্তন সত্য হল,ছেলে মেয়ে যখন একে
অপরের কাছে যায় তখন তাদের কাছে
পাওয়ার ইচ্ছাটা তীব্রতর হয়। আজ আর না
আবার অন্যদিন লিখব.......
কয়েক পেজ ফাকা তারপর....
.... হি হি হি.....
আজ আমার মনটা অনেক ভালো। পাগলটাকে শায়েস্তা করছি।
আমার কাছে না বসতে দিলে ওর চেহারা যে কেমন হয়, না দেখলে বুঝতামই না।
নাকটা ফুলে ফুলে ওঠে। মনে হয় যেন দুটো বাচ্চা আইস্ক্রিম নিয়ে ঝগড়া করেছে। আর আদি হেরে যাওয়া বাচ্চাটা।নাক ফুলিয়ে কান্না করবে এখনি.........
তখন তোমাকে এত্তো এত্তো এত্তগুলা ভাল
লাগে......
অনেক অনেক ভালবাসি তোমাকে.....
বিয়ের পর যদি নাক ফুলাও তখন বুঝাব যা
এখন পারলাম না...... হি হি হি!!!
তোমাকে ছেড়ে থাকতে আমার অনেক
কষ্ট হয়। আরও বেশি কষ্ট হয় যখন আমার
ছোট ছোট ঝগড়ার পেছনে লুকিয়ে থাকা
ভালবাসা বুঝতে পারোনা। তখন একা একা কাঁদি।
আর হ্যাঁ, যখন রাগ হয়ে তোমার কাছে
ব্যাগ ফেলে আসি আর তুমি পেছন থেকে
ডেকে ফেরত দিয়ে যাও। ওটা কিন্তু আমি
ভুলে ফেলে আসি না। ইচ্ছা করেই ফেলে
আসি যাতে তুমি আমার কাছে আরও একবার আসতে পারো।
অনেক দিন থেকে তোমাকে একটা কথা
বলব ভাবছিলাম।
কিন্তু কেমন যেনো আনইজি লাগছে......
কি করি বলতো?????
মা ডাকছে আর একদিন লিখব.......।
।।
;
আর কিছুই লেখা নেই সব সাদা। কি বলতে
চেয়েছে সেটাও লেখা নেই। নিজের
ভেতর কেমন একটা অপরাধ বোধ জেগে
উঠল। যে আমাকে এত ভালোবাসে তাকে
সামন্য ভুল বোঝাবুঝি নিয়ে এত দুরে
সরিয়ে দিয়েছি! ডায়েরিতে দু ফোটা
পানি পড়ল। অনুভব করলাম নিজের চোখ ভিজে গিয়েছে।
;
বাড়িটার চারপাশে উঁকিঝুঁকি মারছি অনেক্ষন। কাউকে চোখে পড়ল না। শেষে সাহস করে ভেতরে ঢুকে পড়লাম। নাহ কেউ নেই। বাড়ির সামনে পায়চারী করছি। পাশেই কেউ বলে উঠল "কাকে চাই? " মুরুব্বী মত মহিলাটা। ভাল করে পরখ করে দেখল আদি।
- কার কাছে আসছ ভাই?
- দাদিমা.... এইটা তাহমিনাদের বাড়ি না?
- হ্যা... ওরা তো গ্রামে গেছে? তোমাকে তো চিনলাম না।
- আমি তাহমিনার ফ্রেন্ড।
- ওও.... মেয়েটা এখানে থাকে না।
- মানে? কোথায় থাকে?
- ও তো অনেক দিন থেকে গ্রামে থাকে। ওর মা বাবা কিছু দিন হলো ওকে দেখতে গেছে।
মেয়েটার ঘাড়ে কোন ভুত যে চেপেছে!
আমার নাতীর মত জামাই পেয়ে দেখাক আগে! তারপর বলব।এমন জামাই কই পাবে পোড়ামুখো!
পাশের ছাদ থেকে একটা ছেলে বলে উঠল "দাদু আবার শুরু করলা তুমি? "বাড়ি এসো.....
ছেলেটা কম করে ছ" ফিট হবে। আন্দাজ করল আদি। এর সাথে কি তাহমিনার বিয়ের কথা ছিলো নাকি!
- দাদি একটা হেল্প করবেন আমাকে?
- কি চাই বল?
- বলছিলাম আমাকে তাহমিনার গ্রামের বাড়ির ঠিকানাটা দিতে পারবেন?
- তুমি ওর ঠিকানা দিয়ে কি করবা বাপু?
- না দাদি....আসলে....
বৃদ্ধা অনেক রাগি কি থেকে কি বলে বসি, শেষে না আবার সাহায্য করল না।
- কি ভাবছ কি?
- আসলে দাদি আমাদের কলেজে একটা গুরুত্বপূর্ণ সেমিনার আছে কিছুদিন পর। সেখানে ভালো স্টুডেন্টস দের অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে। তাই স্যার নিজেই বলল ওকে নিয়ে যাওয়ার কথা.....
;
দু দিন পর.....
বাসায় কাউকে কিছু না বলেই বেরিয়ে পড়লাম। হাতের কাজ সারতে সময়টা বেরিয়ে গেছে। না হলে সেদিনই মহিলার কাছ থেকে ঠিকানা নেয়ার পর বেরিয়ে পড়তাম।
একটা চাকরি করতে গেলেও এত প্রশ্ন করে না ইন্টার্ভিউতে,যত প্রশ্ন করছে বুড়ি.......
বাস থেকে নেমেছি অনেক্ষন হল। কিন্তু কেউ ঠিক মত বলতে পারছেনা, ওদের বাড়ি ঠিক কোথায়। ওদিকে প্রায় বিকেল হয়ে গেছে।ওদের এলাকার বাজারে ঘুরছি। হঠাৎ এক ভাই বলল সে নাকি চিনে.....
তার পিছু পিছু চললাম। দূর থেকে দেখিয়ে দিল বাড়িটা। ভয়ে ভয়ে পা চালাচ্ছি। জানিনা কি হবে......
বিশাল এক কাঠের দরজা।ওপাশের কিছু দেখা যায় না।পূরোনো আমলের বেশ ভালই দেখতে। ধাক্কা দিয়ে নড়াতেও পারলাম না।ওপাশ থেকে একজন খুলে দিল। মহিলা বেশি বয়স্ক না। চল্লিশের কাছাকাছি। গলার স্বর কেমন কর্কশ...
- জ্বী তাহমিনা....
পাশে সরে ঢোকার জাইগা করে দিলেন।তারমানে ঠিক জাইগাতে এসেছি।
- এই মুহু দেখতো কে এসেছে তোর কাছে...
বাড়ির উঠোন টা একটা ছোটখাটো মাঠ।পেয়ারা গাছে অনেক বড় বড় পেয়ারা।দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে।
- কে আপনি?
পরিচিত সেই কন্ঠ। চিনতে কষ্ট হলনা আদির।পেছনে ঘুরে দাড়াল। আমার উত্তর দেয়ার প্রয়োজন নেই। দ্বিতীয় কথা বলার জন্য মুখ খুলেছিল মাত্র মেয়েটা। আদিকে দেখে থমকে গেল। ওর পেছনে বাবা মা দাড়িয়ে আছে।
- কেন এসেছো?
- ভুলটা আমার ছিল ক্ষমা চাইতে এসেছি!
- ক্ষমা? ঠিক আছে দিলাম।এবার এস.....
- আরও কিছু চাওয়ার ছিল.....
- বাবা ওকে যেতে বল......
> তুই চিনিস ওকে?
পাশ থেকে তাহমিনার মা বলল এটাই কি আদি?
তাহমিনার নিস্তব্ধতা দেখে তারা বুঝে নিল।ওর বাবা এগিয়ে এল। হাত ধরে টেনে নিয়ে আসল তার নিজের ঘরে। কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল আদি....
- তোমাদের ভেতর কি ঘটেছিল জানি না।তবে আমার মেয়েকে এভাবে কাঁদতে দেখিনি কখনো। জন্মের পর এই প্রথম মনে হয় কেঁদেছে ও। বিয়ের জন্য কত ভাল ভাল পাত্র পেয়েছিলাম। কোন ছেলেকে দেখেনি পর্যন্ত। চাপ সহ্য না করতে পেরে এখানে চলে এসেছে।
- একটা ছোট ভুল বোঝাবুঝি ছিল আংকেল। দোষটা আমারই।
- আমার মেয়ের দায়িত্ব যদি নিতে চাও সেভাবেই নিতে হবে, যেন আমাদের কোন চিন্তা না থাকে।
- আপনি নিশ্চিন্ত থাকেন আংকেল.....
যেন একটা খুটি পেলাম।
- হয়ত জানো ও অনেক রাগি আর জেদী।আমি ডেকে দিচ্ছি.....
;
- ভুল তো মানুষেরই হয়। আমি তো সে জন্য মাফ চাইতেছি। দে না মাফ করে!
- এত দিন ছিল কোথায় এই ভন্ডামী?
- সত্যি বলছি আমি তোকে......
মাঝপথে থামিয়ে দিল তাহমিনা!
- চুপ থাক, আরও আগেই আসতি যদি সত্যিই ভালবাসতি আমাকে।
- আসলে তোর ডায়েরিটা না থাকলে আমি হয়ত কোনদিন জানতামই না তুই আমাকে কতটা ভালবাসিস।
- তুই আমার ডায়েরি পড়েছিস?
- হ্যা পড়ছি.....
- কেন পড়লি এএএএএএএএ.........
দু হাত দিয়ে যেন মশা মারছে এভাবেই থাপ্পড় শুরু করে দিল ও...
- কাঁদছিস ভাল কথা! হাত গুলো কন্ট্রোলে রাখ। আমার তো লাগছে।
- কতো জ্বালাবি আমাকে? আজ তোকে.......
এবার গলার উপর চড়ে বসল....
- আ...আ...আ..... মরে যাব তো.....
হঠাৎ আংকেলের ফোনটা বেজে উঠলো।দরজা খোলাই আছে। উনি আসার আগেই তাহমিনা রিসিভ করল ফোনটা...
- ভাই সাহেব মেয়েকি রাজি হল বিয়েতে?
তাহমিনার সোজা জবাব.....
- জ্বী, রাজি..... আগামী এক সপ্তাহর মধ্যে বিয়ে। পাত্রের নাম আদি। আপনারা স্বপরিবারে আমন্ত্রিত।
বলেই কেটে দিলো...
- কে ফোন করেছিল?
- আমাদের বাসার পাশের বাসার আন্টি।ওনার ছেলের জন্য আমাকে পছন্দ তার।ওদের জন্য আর তোর জন্য আমাকে এখানে থাকতে হয়েছে।
- আচ্ছা ডায়েরিতে লিখেছিলি তুই আমাকে কিছু বলতে চাস.....
- ওই বিয়ের কথা। বাবা মাও চাপ দিচ্ছিলো।পালিয়ে যাব ভাবছিলাম। কিছুই হল না....
- এখন থেকে কি তুমি বলি?
- এখন তো আর ভালবাসি না তোকে!
- তাহলে বললি যে আমি পাত্র। আমাকে বিয়ে করবি....
- ওসব এমনি বলছি।
- ওহ,আমার বুঝতে ভুল হয়েছে। আসি রে... বাস ধরতে হবে।
চেয়ারের উপর থেকে ব্যাগটা তুলে নিলাম।চোখটা কেমন ঝাপসা লাগছে.....
দরজায় পা রাখতেই পেছন থেকে জাপটে ধরল তাহমিনা...
- এবারও বুঝলে না আমাকে। এতদিন অপেক্ষায় থেকেছি তুমি আসবে। এসেছো অনেক দেরি করে। আর তাও আবার আমাকে রেখে চলে যাচ্ছো।
- তুমি তো বললে ভালোবাস না।
- ওরে বোকা অনেক দিন তোমার নাক ফুলানো দেখিনা। সেটা দেখার জন্যই.....
- তোমার বাবা.....
সাথে সাথে ছেড়ে দিল তাহমিনা...
ঘুরেই চুমু খেলাম ওর গালে। বুঝতে পারল আমি মিথ্যে বলেছি...
- শয়তান.....
.
লিখাঃ Asadur Rahman Hadi.

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চিরসত্য

"আজ তুমি যাকে যেভাবে কষ্ট দিচ্ছো, ঠকাচ্ছো, অবহেলা করছো, ইমোশন নিয়ে খেলতেছো, প্রতারণা করছো। ভেবো না যে তুমি পার পেয়ে যাবে। অতটা সোজা মনে করো না। হঠাৎ কোন একদিন আসবে যেদিন তুমি ঠিক একই ভাবে কারোর দ্বারা কষ্ট পাবে, ঠকে যাবে, অবহেলিত হবে, প্রতারিত হবে। আর সেই দিনটা খুব বেশি দূরে নয়... অপেক্ষায় থেকো!! . জানো তো এই পৃথিবীটা কিন্তু গোল। এখানে তুমি যা করবে, যে অন্যায় করবে, যে পাপ করবে, তা ঠিক ঘুরেফিরে কোন একদিন তোমার কাছে চলে আসবেই। আসতে বাধ্য... তোমার কারণে যদি কারোর চোখ থেকে এই ফোটা পানিও পড়ে যায়, অপেক্ষায় থাকো কেউ একজন তোমার চোখ থেকে শত শত ফোটা পানি পড়ার কারণ হবে!! . দিনের পর দিন যার সাথে ভালোবাসার মিথ্যে অভিনয় করে আসতেছো। একটু একটু করে একটা মানুষের বিশ্বাস নিয়ে মন মতো খেলতেছো। অথচ ও পাশের মানুষটা তোমার ছলনা কিছুই বুঝতে পারেনি, তাই বলে ভেবো না তুমি জিতে গেছো। অপেক্ষা করো একই ভাবে কেউ না কেউ তোমার ভালোবাসা নিয়ে মিথ্যে অভিনয় করে যাবে, তোমার বিশ্বাস নিয়ে খেলবে!! . আমি নিজেও এটা খেয়াল করেছি।  যদি কখনো কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি তো অন্য কোন দিন কেউ একজন তারচেয়েও বেশি খারাপ ব্যবহ

★মিষ্টি ঝগড়া★

- তোমার তো এখানে বসে থাকার কথা ছিলনা!! তবে এখানে কেন বসে আছো? হাদী কে শাসানোর মতো করে কথা গুলো বলতে থাকে অধরা। পাক্কা ১৫ মিনিট ধরে পুরো পার্ক তন্ন তন্ন করে হাদী কে খুজেছে অধরা। দু'জনের দেখা করার কথা ছিলো পার্কের অন্য কোনায় যেখানে অনেক গুলো ফুল গাছ আছে। লাল রঙের ফুল অধরার খুব পছন্দ। হাদী অধরা কে সবসময় লাল রঙের ফুল দিয়েই প্রপোজ করে। পার্কে আসলে যখনই অধরার অভিমান হয় তখন-ই গাছ থেকে একটা লাল ফুল এনে অধরাকে দেয়। আজ সে ধরনের কোনো সুযোগ নেই। অধরার দিকে না তাকিয়েই হাদী জবাব দিতে থাকে। - এখানে অনেক ঘাস আছে তাই বসে আছি। - তুমি কি ছাগল যে ঘাস দেখে বসতে হবে? -আমি ঘাস দেখে বসিনি, ঘাসের উপর বসে আছি। চাইলে তুমিও বসতে পার। - আমি তোমার মত ছাগল না। -আমি জানি তুমি ছাগল না। ছাগলের স্ত্রী লিঙ্গ ছাগী। - কি আমাকে তুমি ছাগী বললে!!!!???? -এখনো বলিনি, তবে ছাগলের বউ ছাগীই হয়। - আমি তোমার বউ না। - আমি তো বলিনি তুমি আমার বউ। - এতো কথা প্যাঁচাও ক্যান? তুমি একটা রামছাগল। - রামছাগলের দাড়ি থাকে। আমি একদম ক্লিন শেভ। - ওহ অসহ্য!!! কেনো যে তোমার মত ইডিয়েটের সাথে প্রেম করি? - আমরা প্রেম করছি না। আমরা

♥ঝগড়াটে মিষ্টি বউ♥

– এই যে মিস্টার বাদাম . কথাটা শুনে বন্ধ মুখ টা হা হয়ে গেলো। পার্কের টুলে বসে বসে বাদাম খাচ্ছি। এমন সময় মেয়েলী কন্ঠে এমন ডাক। এটা নিশ্চই কল্পনার বাইরে। . – এই আমার নাম আছে। আর আপনি অাগন্তুক কোথা থেকে এসে আমাকে মিস্টার বাদাম বলছেন?? – অামি অাপনার নাম জানি না তাই বাদাম খাচ্ছেন দেখে ওটা বললাম। – মাথায় সমস্যা??? – থাকতেও পারে। – ওই অাপনি অামাকে পাগল ভাবছেন?? – হতেও তো পারেন। – অাপনাকে অাপনাকে – কি?? – অামার মাথা। – তো এটা বলতে এরকম করা লাগে?? – ওহহ এই অাপনি কে?? – এতক্ষন যার সাথে ঝগড়া করছেন. – ও মোর খোদা অামারে উঠাই নাও না ক্যান। – দাড়ি বা মই কিছু তো খোদায় দিলো না উঠবেন কি করে?? – অাপনি কি পাবনা থেকে এসেছেন?? – মরতে যাবো পাবনা?? – তো অামাকে মারতে অাসছেন কেন?? – মারতে অাসলে তো সেই কখন মেরে ফেলতাম। – তো কেন এসেছেন?? – অাপনাকে নিতে। – কোথায়?? – পাবনায়। – অাপনার মাথায় সমস্যা অাপনি যান। – অাসুন তো। – কোথায়?? – অামার সাথে। – দেখুন অামার একজনের সাথে দেখা করার কথা। – লাগবেনা সেটা। – অাপনাকে অামি চিনিনা অাপনার সাথে কোথায় যাবো?? – এতক্ষন কথা বলার পরও অচেনা?? – হুমম